ঘটনা-১: মাসখানেক আগের ঘটনা। ফাঁসিদেওয়ার বিধাননগর। বাড়ির মালিক বিধবা মহিলা। তাঁকে সাড়ে তিন হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে ইটের দেওয়াল ও টিনের চাল দেওয়া দু’টি রুম ভাড়া নেয় বিহার ও ঝাড়খণ্ডের চার যুবক। তারা নিজেদের ঠিকা শ্রমিক পরিচয় দিয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যে সেই ঘরে দুই মহিলা সহ আরও চার যুবক আসে। তাদের সঙ্গে ছিল বাইক। সুযোগ বুঝে হিলকার্ট রোডে জুয়েলারি দোকানে ডাকাতি করে তারা চম্পট দেয়।
ঘটনা-২: কয়েকদিন আগে বাগডোগরার রাঙাপানিতে বাড়ি ভাড়া নেয় চার যুবক। অগ্রিম হিসেবে তারা বাড়ির মালিককে চার হাজার টাকা দিয়েছিল। তারা নিজেদের রান্নার গ্যাসের ওভেন, ফ্রিজ ও এসি মেকানিক পরিচয় দেয়। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ওই চার যুবক গাড়ি ভাড়া করে অপারেশনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পুলিসের নাকা তল্লাশিতে ধরা পড়েছিল।
এভাবেই শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন এলাকায় ছদ্মবেশে ঘাঁটি গাড়ছে ভিনরাজ্যের দাগী অপরাধীদের গ্যাং। তাই ভাড়াটিয়াদের উপর নজর রাখতে তৎপর হয়েছে শিলিগুড়ি পুলিস কমিশনারেট। তারা নজরদারির জন্য একটি ‘অ্যাপ’ চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। একইসঙ্গে গ্রামীণ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা চাঙ্গা করতে নড়েচড়ে বসেছে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ। ইতিমধ্যে তারা বিষয়টি নিয়ে দার্জিলিং জেলা পুলিসের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে উত্তরবঙ্গ তো বটেই, দেশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর শিলিগুড়ি। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই প্রবেশদ্বার বাণিজ্যনগরী হিসেবে পরিচিত। এই শহরের পাশেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও নেপাল। সিকিম ও বিহার পাশেই। সহজেই সড়ক ও রেলপথে এখান থেকে অসম ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান যাতায়াত করা যায়। গোয়েন্দারা বলেন, এমন ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এখানে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘাপটি মেরে থাকছে ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতীরা। সেলসম্যান, হোম ডেলিভারি বয়, এসি ও ফ্রিজ মেকানিক, ঠিকা শ্রমিকের বেশে শহরের অলিগলি রেকি করছে। এমনকী, তারা সাধারণ মানুষের বাড়ি ও দোকানে ঢুকে ঠান্ডা মাথায় অপারেশনের ছক কষছে। এরপর ‘ঝোপ বুঝে কোপ মেরে’ চম্পট দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। ইদানিং, শহরে ভিনরাজ্যের দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ায় উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। কিছুদিন আগে এবিষয়ে পুলিসের সঙ্গে বৈঠক করেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তিনি সেই সময় পুলিসকে ভাড়াটিয়া ও পেয়িংগেস্টদের উপর নজরদারি রাখার জন্য এসওপি তৈরির নির্দেশ দেন। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিস কমিশনার (পশ্চিম) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে এসওপি তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এ ব্যাপারে একটি অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে শীঘ্রই সেটি লঞ্চ করা হবে। পাশাপাশি, শহরে নাকা তল্লাশি, সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এদিকে, পুলিসি সার্ভেল্যান্স বা নজরদারি কম থাকায় শহর সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকায় দুষ্কৃতীরা ঘাঁটি গাড়ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। এখানকার গ্রামীণ এলাকা দার্জিলিং জেলা পুলিসের অধীনে। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিসের সঙ্গে কথা হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ভাড়াটিয়াদের উপর নজরদারি বাড়াতে পুলিসও বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।