• শিলিগুড়িতে বাংলায় সাইনবোর্ড লেখার মেয়াদ বৃদ্ধি মহালয়া পর্যন্ত
    বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: ফের বাড়ল সময়সীমা। শিলিগুড়ি শহরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখার সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছে মহালয়া, ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর একথা ঘোষণা করেন মেয়র গৌতম দেব। এনিয়ে আপত্তি না তুলে পুরসভার পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি ও সিপিএম। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পুরসভার এমন সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, পুরসভার এই পদক্ষেপ বাংলা বিদ্বেষের বিরুদ্ধে বার্তা দেবে। 

    শিলিগুড়ি শহরে বাংলা ভাষার প্রচলন বাড়িয়ে তুলতে বহুদিন ধরে তৎপর পুরসভা। তারা শহরের প্রতিটি দোকান, শপিংমল, মার্কেট কমপ্লেক্স, বেসরকারি সংস্থা, হোটেল, নার্সিংহোমের সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে দু’বার ব্যবসায়ীদের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও পুরসভার সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এজন্য এদিন রামকিঙ্কর হলে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, দোকানের মালিক, বিপণন কেন্দ্র, বেসরকারি অফিস, রেস্তরাঁ, হোটেল, নার্সিংহোম প্রভৃতির প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা সভা করে পুরসভা। 

    মেয়র বলেন, এদিনের সভায় সর্বস্তরের নাগরিকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। সকলেই বাংলায় প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড লেখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে তাঁদেরকে মহালয়া পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। মাতৃপক্ষের ভোরে নতুন রূপে সেজে উঠবে শহর। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অফিস ও সংস্থার সাইনবোর্ডেও বাংলা ভাষা ব্যবহার করার জন্য তাদের চিঠি দেওয়া হবে। 

    প্রসঙ্গত, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসের দিন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থার সাইনবোর্ডে বাংলাভাষার উল্লেখ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। সেই সিদ্ধান্ত বোর্ড মিটিংয়ে সর্বসম্মতিতে পাস করে। পয়লা বৈশাখ থেকে কার্যকর করার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। পয়লা বৈশাখ ছিল ১৫ এপ্রিল। তখন ব্যবসায়ীদের একাংশ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার মেয়াদ বাড়ানোর দাবি তোলেন। পুরকর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নিয়ে সময়সীমা বাড়িয়ে করে ৩০ জুন। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার তিন সপ্তাহ পরও শহরের অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষা স্থান পায়নি। 

    এদিনের সভায় ব্যবসায়ীদের একাংশ বলেন, পুরসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি নেই। খরচের জন্য অনেকে এখনও সাইবোর্ড লিখতে পারেননি। একটি নার্সিংহোমের প্রতিনিধি বলেন, পুরসভার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নার্সিংহোমের প্রতিটি স্তরে বাংলায় ফলক লেখা হচ্ছে। এমনকী রোগী ভর্তির নথিও লেখা হচ্ছে বাংলায়। হোটেল ব্যবসায়ীর প্রতিনিধিরা বলেন, হোটেলেও বাংলায় সাইনবোর্ড লেখা হচ্ছে। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে ২০ বছর আগে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়া উচিত ছিল। আবার কেউ কেউ বাংলায় লেখা সাইনবোর্ডের নমুনা দেখিয়ে বলেন, এক্ষেত্রে পুরসভার পাশে আছি। সভায় বাংলাপক্ষের সদস্য বুলবুল সরকার বলেন, মেয়রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করা মানে তাঁকে অপমান করা। এটা আমরা বরদাস্ত করব না। তাই সকলের কাছে অনুরোধ বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে পুরসভার সিদ্ধান্ত কার্যকর করুন। 

    এদিকে, সভায় পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির অমিত জৈন বলেন, মাতৃভাষাকে মর্যাদা না দিলে নিজেদের সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে। তাই সাইনবোর্ডে বাংলাভাষা উল্লেখ করার ব্যাপারে পুরসভা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা দলের পক্ষ থেকে সমর্থন করছি। সভায় না থাকলেও সিপিএম কাউন্সিলার শরদিন্দু চক্রবর্তী বলেন, পুরসভার ওই সিদ্ধান্তকে আমরাও সমর্থন করছি। 
  • Link to this news (বর্তমান)