ভোটের আগে ‘ভোট’! তৃণমূলের প্রার্থী ঠিক করতে জনমত যাচাই
বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছতে আমজনতার রায় চাইছে তৃণমূলের সহযোগী সংস্থা। আমজনতার পাশাপাশি ‘ভোট’ দানের তালিকায় শাসকদলের তৃণমূল স্তরের নেতা এবং কর্মীরাও রয়েছেন। নেতারা তা আঁচ পেয়ে ‘ভোটার’দের প্রভাবিত করতেও শুরু করেছেন। ‘কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে প্রার্থী হিসেবে আমার নামটাই বলবি।’ এই জাতীয় ঠান্ডা হুমকিও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কমিশনের ভূমিকায় থাকা সহযোগী সংস্থাও বোকা নয়। কোনও নেতার কেউ গুণগান করলেই সংস্থার কর্মীরা তাঁর সম্পর্কে আরও বেশি করে তথ্য সংগ্রহ করছেন। তাতে ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ছে। এখন যাঁরা বিধায়ক রয়েছেন তাঁদের সম্পর্কেও খুটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই কয়েক বছরে তাঁরা কেমন জনসংযোগ রেখেছেন, উন্নয়নমূলক কাজে কতটা তৎপর এসব তথ্য তারা সংগ্রহ করতে শুরু করেছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকজন বিধায়কের ‘পারফরমেন্স’ সন্তোষজনক নয়। তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় রয়েছে। ওই কেন্দ্রগুলিতে বিকল্প হিসেবে নতুন মুখের খোঁজ চলছে। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে দু’- তিনজন দাবিদার রয়েছেন। কোনও কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে দাবিদারের সংখ্যা আরও বেশি। সেই দাবিদারদের কাছেও সহযোগী সংস্থা পৌঁছে যাচ্ছে। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, ‘আপনার এলাকায় কাকে প্রার্থী করলে ভালো হয় বলুন তো?’ লাজুক গলায় উত্তর আসছে ‘আমার কথা ভাবতে পারেন’। এমন উত্তর আসবে সেটা সহযোগী সংস্থা আগেই প্রত্যাশা করেছিল। তাই সেই উত্তরে কর্মীরা কোনওভাবেই প্রভাবিত হচ্ছেন না। দলের এক নেতা বলেন, আগে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ভাগ্যের উপর নির্ভর করত। কিন্তু এখন দক্ষতার উপর নির্ভর করছে। কাউকে প্রার্থী করার আগে সহযোগী সংস্থা সবদিক ঝালিয়ে নিচ্ছে। গত নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে কয়েকজন প্রার্থী হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা জয়ী হলেও বিধায়ক হিসেবে দক্ষতা দেখাতে পারেননি। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত ‘উন্নয়ন’ ভালোই করেছেন। সেইসব জনপ্রতিনিধিকে ব্যাক বেঞ্চে পাঠানো হবে। আবার কয়েকজন ব্লক সভাপতি এখন থেকেই ভেবে নিয়েছেন তাঁরাই প্রার্থী হচ্ছেন। এমন চিন্তা মাথায় আসার পর থেকেই তাঁদের চালচলন বদলে গিয়েছে। দামি ব্র্যান্ডের জুতো, জামা পরে কর্মীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার পার্লারে যেতে শুরু করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রার্থী তালিকায় এবারও চমক থাকবে। যাঁরা টিকিটের প্রত্যাশা করছেন তাঁদের কারও কারও স্বপ্নভঙ্গ হতে পারে। আবার প্রত্যাশা না করলেও কর্মদক্ষতার জন্য তাঁদের কপাল খুলে যেতে পারে। তবে এবার প্রার্থী বাছাইয়ে কোনও ‘দাদা’র সুপারিশ কাজ করবে না, সেই ইঙ্গিত দিয়েছে সহযোগী সংস্থা। তাই কাউকে প্রভাবিত করেও লাভ নেই। সেই বার্তাও দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলেন, কে প্রার্থী হবেন, সেটা নেতৃত্ব ঠিক করবে। এব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। জানাও নেই।