• সরকারি অফিস থেকেই প্রাথমিকের পাঠ্যবই লুট, তোলপাড় শিক্ষাদপ্তর
    বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল  বর্ধমান 

    পাচার হয়ে যাচ্ছে পাঠ্যপুস্তকও! তাও আবার সরকারি অফিস থেকে। বালি, কয়লার মতোই ট্রাকে তুলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। এমনই অভিযোগ ঘিরে পূর্ব বর্ধমান এখন তোলপাড়। পত্রপাঠ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষাদপ্তর। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘গুরুতর অভিযোগ। সদর উত্তরচক্রের অফিস থেকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য রাখা বই পাচার হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। সরকারি অফিস থেকে নতুন বা পুরনো কোনও বই বিক্রি করা যায় না। অফিসে বই নষ্ট হয়ে গেলেও তা গোডাউনে রাখতে হয়। অভিযোগ সত্য হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তদন্তের জন্য কয়েকজন আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

    শিক্ষাদপ্তরে জমা পড়া অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ হওয়া বই সদর উত্তরচক্রের এসআই অফিসে জমা ছিল। গত ১২ এপ্রিল এবং ৩০ এপ্রিল দু’টি ট্রাকে পাঠ্যবইগুলি অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। সেগুলি বিক্রি করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজন পড়লেও বই সরবরাহ করা যাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এক কপি করে বই দিতে হয়। সেটাও দেওয়া যাচ্ছে না। ওই অভিযোগপত্রে ছ’জন শিক্ষকের স্বাক্ষর রয়েছে। কার অঙ্গুলি হেলনে বইগুলি বাইরে পাচার করা হয়েছে, সেটাও চিঠিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের শিক্ষা দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার বলেন, ‘ভয়ানক অভিযোগ। পড়ুয়াদের পাঠ্যবই পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। এই অভিযোগ আমার কাছেও জমা পড়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

    এতদিন মিড ডে মিলের চাল চুরি বা স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠত। বিভিন্ন জেলায় মিড ডে মিলে গরমিলের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু বই পাচারের মতো অভিযোগ কোথাও ওঠেনি। সেটাও এবার তালিকায় ঢুকে পড়ল! বর্ধমান (সদর) মহকুমাশাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ এর এক আধিকারিক বলেন, শিক্ষাদপ্তরে নিজেদের মধ্যে দড়ি টানাটানি রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও একাধিক সংগঠন রয়েছে। তাঁদের মধ্যেও ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা চলে অনবরত। অভিযোগ উঠলেই সেটা সত্য প্রমাণিত হবে, এটা ধরে নেওয়ার কারণ নেই। তবুও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। তাই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের বিনামূল্যেই বই দেওয়া হয়। সেটা বাইরে কেজি দরে বিক্রি করা ছাড়া অন্য উপায় নেই। কেজি দরে বিক্রি করলেও দুই ট্রাক বইয়ের দাম অনেক বেশি। এর নেপথ্যে কারা, সেটাই এখন বের করা শিক্ষাদপ্তরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)