বোলপুরের বহুতলগুলি জতুগৃহ, প্রশ্নের মুখে পুরসভা ও দমকল
বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, বোলপুর: শহর বোলপুরে বারবার বহুতল ফ্ল্যাটে অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও অধিকাংশ জায়গাতাইে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। শনিবার বোলপুরের মিশন কম্পাউন্ড এলাকার একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগায়ফের সেই প্রশ্ন ও অনিয়মগুলি ফের সামনে এল। পাঁচ মাস আগে বোলপুরের বাঁধগোড়া এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বৃদ্ধ দম্পতি সহ তিনজনের মৃত্যু হয়। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে বলে তদন্তে জানা যায়। সেখানে ফ্ল্যাট থেকে বেরনোর মুখে ছিল ইলেকট্রিক মিটারের বোর্ড। সেই ঘা শুকোতে না শুকোতেই ফের একই কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে মিশন কম্পাউন্ডে। কাকতালীয়ভাবে, এই ফ্ল্যাটের ওঠা বেরনোর মুখেও রয়েছে বিদ্যুতের মিটার বোর্ড। তাই নিয়ম বহির্ভূতভাবে তৈরি এই ফ্ল্যাটগুলির অনুমোদন কীভাবে হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ফ্ল্যাটেরই আবাসিকরা। তাঁদের প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুরসভা ও প্রশাসনের অনুমোদন ব্যবস্থা। এই বেআইনি কাজে যেকোনও সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আশঙ্কিত ফ্ল্যাটের আবাসিকরা। তাদের অভিযোগ তিনজনের মৃত্যুর পরও হুঁশ ফেরেনি পুরসভা ও প্রশাসনের। তার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রোমোটারের বিরুদ্ধে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা পুরসভা ও বোলপুর থানায় মাস পিটিশন দিয়েছেন। এমতাবস্থায় পুরসভা কী ব্যবস্থা নেয় সেদিকেই নজর সকলের।
প্রসঙ্গত, গত ১০ ফেব্রুয়ারি বোলপুরের শ্রীনিকেতন রোডের বাঁধগোড়া মোড়ের একটি পাঁচতলা আবাসনে ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ড হয়। শর্ট সার্কিট থেকে ওই আগুন লাগে বলে পুলিস জানতে পারে। আগুনে ঝলসে ঘটনাস্থলেইসেদিন মারা যান আবাসনের বাসিন্দা বৃদ্ধ দম্পতি স্বপনকুমার নন্দী ও অঞ্জু নন্দী। বাকি আহতরা বোলপুর ও দুর্গাপুরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এরপর গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ওই ফ্ল্যাটের জমির মালিক অরুণ দাসেরও মৃত্যু হয়। তিনি দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ফের একইভাবে শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটল মিশন কম্পাউন্ডের ফ্ল্যাটে।
ফ্ল্যাটের বাসিন্দা জিষ্ণু চৌধুরী, সিদ্ধার্থ সাহা, সুব্রত মজুমদাররা বলেন দমকলের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনও বহুতলে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়া একাধিক বেরবার রাস্তা রাখাও নিয়ম। অথচ আমাদের ফ্ল্যাটে ন্যূনতম সেই ব্যবস্থা নেই। দমকলের এক আধিকারিক বলেন ফ্ল্যাট নির্মাণ ক্ষেত্রের চারপাশে চার ফুট ছেড়ে রাখার নিয়ম রয়েছে। অথচ বোলপুরের অধিকাংশ ফ্ল্যাটে এই নিয়ম মানা হয় না। এছাড়া, জি প্লাস ফোরের অনুমতি নিয়ে জি প্লাস ফাইভ এমনকী সাততলা পর্যন্ত ফ্ল্যাট তোলা হচ্ছে। যা শুধু অবৈধই নয়, বিপজ্জনকও। তাই পুরসভা ও প্রশাসনের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
ফ্ল্যাটের অপর দুই দ্বৈপায়ন রায়, রৌনক ঘোষ বলেন, এই ফ্ল্যাট সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তৈরি হয়েছে। ২০১৯ সালে নির্মাণ হলেও এখনও আমরা হ্যান্ড ওভার ও ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাইনি। অনুমোদন ছাড়াই লিফট চলছে। এই বিষয়গুলি বারংবার পুরসভা, প্রশাসন, জেলাশাসক, এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরেও চিঠি লেখা হয়েছে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বোলপুর থানায় মাস পিটিশন দিয়েছি। তবুও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মাঝরাতে আগুন লাগলে বাঁচতে পারব কিনা জানিনা। এই ঘটনায় পুরসভার চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষ বলেন, দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। বিষয়টি নজরে এসেছে। পুরসভার বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনে আমি নিজে ওই আবাসনে পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।