• পুলিসের তদন্তে চূড়ান্ত গাফিলতি, ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনে বেকসুর খালাস যুবক
    বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ২০১৮ সালে তমলুক থানার চিয়াড়া গ্রামে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বেকসুর খালাস পেল শেখ হামিদুল। নাবালিকার দেহ উদ্ধারের পর মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস হামিদুলকে গ্রেপ্তার করেছিল। তার ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়েছিল তমলুক। ‘হামিদুলের ফাঁসি চাই’ প্লাকার্ড হাতে সাত বছর আগে আদালতেও বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল। বহুল চর্চিত সেই মামলায় গত ১৯ জুলাই রায়দানের কথা ছিল। কিন্তু, হামিদুলকে হলদিয়া উপসংশোধনাগার থেকে তমলুক পসকো কোর্টে হাজির না করানোয় রায়দান স্থগিত হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় মামলার ওই রায় দিলেন পকসো আদালতের বিচারক সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে অভিযুক্তকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেন। এই রায় শোনার পর আদালতেই হতাশায় ভেঙে পড়েন মৃত নাবালিকার বাবা-মা। তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুলিসি তদন্তে গাফিলতির জেরেই মেয়ের খুন ও ধর্ষণের মামলায় সুবিচার হল না বলে আক্ষেপ ওই দম্পতির।

    মামলার সরকারি আইনজীবী সুতপা সামন্ত বলেন, এই মামলায় মোট ১৮জন সাক্ষী সাক্ষ্যদান করেছেন। নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর স্পষ্ট কারণ উল্লেখ নেই। তাছাড়া, ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবে পাঠানো নমুনাও যথেষ্ট ছিল না। পুলিসি তদন্তে গাফিলতির কারণেই অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেল। আদালতও এমন মন্তব্য করেছে।

    উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ৩০মে চিয়াড়া গ্রামের ১৪ বছরের এক নাবালিকা নিখোঁজ হয়ে যায়। পরদিন তমলুক থানায় মিসিং ডায়েরি করে পরিবারের লোকজন। ২ জুন গ্রামেরই একটি খড়িবন থেকে নাবালিকার পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। এরপর নাবালিকা ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে উত্তাল হয় গোটা এলাকা। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের দাবিতে দেহ ঘিরে বিক্ষোভ হয়।

    এরপর পুলিস কুকুর এনে তদন্ত করা হয়। ৫জুন পুলিস ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শেখ হামিদুলকে গ্রেপ্তার করে। তখন থেকে হামিদুল সংশোধনাগারেই ছিল। নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছিল নাগরিক সমাজও। সেইসময় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন রায় শোনার জন্য এদিন আদালতেও এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বাগনানের বাসিন্দা অভীক নাথ বলেন, ঘটনার শুরু থে঩কেই পুলিসের ভূমিকা যথাযথ ছিল না। পুলিস অভিযুক্তকে ধরতে বাধ্য হলেও তদন্তে গাছাড়া মনোভাব দেখিয়েছে। কলকাতা ফরেনসিক ল্যাবে নমুনা পাঠানোর সময় পুরুষের হরমোনের নমুনা পাঠানো হয়নি। হায়দরাবাদে ল্যাবে ওই নমুনা পাঠানো হলেও সেই হরমোন কার সেটি শনাক্ত করা হয়নি। প্রতিটি পদক্ষেপে তদন্তে গাফিলতির জেরেই নাবালিকা পরিবার সুবিচার পেল না। কিন্তু, এর বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে যাব।

    ওই নাবালিকার মা বলেন, আমার স্বামী একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করে। প্রতিদিন রাতে দোকান বন্ধ হলে হামিদুলের বাড়ির পাশ দিয়েই বাড়িতে ফেরে। এখন আমাদের ভয়, এরপর হয়তো আমার স্বামীর উপর হামলা চালাতে পারে। আমরা সক঩লে ভয়ের মধ্যে রয়েছি। মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করার পরও সঠিক বিচার পেলাম না। আর পুলিসের উপর আমাদের আস্থা নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)