সম্পর্কে টানাপোড়েন, মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে যুগল আত্মঘাতী
বর্তমান | ২৫ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: দুই বাড়ির সম্মতিতে কথাবার্তা একরকম পাকা। চার মাস বাদে মেয়ের বয়স আঠারো হলেই বিয়ে। তার মাঝেই সম্পর্কে টুকটাক ঝামেলা...টানাপোড়েন। আর তাতেই মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে আত্মঘাতী হলেন প্রেমিক-প্রেমিকা। বৃহস্পতিবার বেলায় এমন মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল ও নন্দকুমার।
এদিন বিকেলে তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যুগলের দেহ একসঙ্গে ময়না তদন্ত হয়। দু’জনের পরিবারের লোকজনই হাজির ছিলেন সেখানে। শোকে বিহ্বল সকলেই। বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল হয়ে যাওয়ার পরও দু’জনে কেন এমন করে বসল, তা ভেবে পাচ্ছেন না দু’টি পরিবারের লোকেরা।
পুলিস সূত্রে খবর, বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ মহিষাদল থানার বামনপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন বিশ্বজিৎ দাস (২১)। সেই সময় বিশ্বজিতের প্রেমিকা গায়ত্রী জানা (১৮) নন্দকুমার থানার শীতলপুরে একটি ব্যাঙ্কে কেওয়াইসি আপডেট করতে গিয়েছিলেন। প্রেমিকের আত্মঘাতী হওয়ার খবর ফোনে পান গায়ত্রী। তড়িঘড়ি ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ি ফিরে যান। গায়ত্রীর বাড়ি নন্দকুমার থানার চুনাখালি গ্রামে। ঘরের ভিতর ঢুকেই ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েন। ভরদুপুরে মেয়ের এভাবে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় মায়ের সন্দেহ। তিনি বিস্তর ডাকাডাকি করেন। কোনও আওয়াজ না পেয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। গায়ত্রীর জেঠু অর্জুন জানা তড়িঘড়ি দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ভাইঝিকে তুলে ধরে ফাঁস থেকে নামান। সঙ্কটজনক অবস্থায় তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পথেই মারা যান গায়ত্রী।
নন্দকুমারের একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল গায়ত্রী। আগামী ডিসেম্বর মাসে তার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে। তারপরেই বিশ্বজিতের সঙ্গে তার বিয়ে। সেই মতো দু’জনের পরিবার কথাবার্তা সেরে রেখেছিল। পরস্পরের বাড়িতে আসা যাওয়াও চলত। জিনিসপত্রের আদান-প্রদানও হতো বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু, গত তিন-চার দিন ধরে দু’জনের মধ্যে কোনও একটি বিষয় নিয়ে মন কষাকষি চলছিল। দু’জনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ওই যুগলের পরিবারকে জানিয়েছেন, দু’জনে ফোনে কথাবার্তা বলত না। একজন ফোন করলে অপরজন কেটে দিত। এভাবে চলার পর বুধবার বিশ্বজিৎ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। সেই খবর গায়ত্রীর কাছে পৌঁছনো মাত্রই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। সেইমতো বাড়িতে গিয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়। গায়ত্রীর বাবা গুরুপদ জানা কর্মসূত্রে অন্ধ্রপ্রদেশে থাকেন। মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর তিনি কর্মস্থল থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
গায়ত্রীর জেঠু অর্জুন জানা বলেন, ‘ওদের দু’জনের বিয়ের কথাবার্তা আগাম সেরে রাখা হয়েছিল। ভাইঝির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে চার মাস বাকি ছিল। সেটা হলেই ওদের বিয়ে দেওয়া হবে বলে সব প্রস্তুতি সেরে রাখা হয়েছিল। তারমধ্যে এই ঘটনায় আমরা হতবাক।’ বিশ্বজিতের বাবা গোপাল দাস বলেন, ‘ছেলে ভিনরাজ্যে ফুলে কাজ করে। বৃহস্পতিবার সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। গতকাল ছেলে মাংস কিনে এনে খাওয়ার আয়োজন করেছিল। এক ফাঁকে বাড়ির দোতালায় উঠে ফোন দেখছিল। তারপর দরজা বন্ধ করে গলায় দড়ি দিয়ে দেয়। গায়ত্রীর সঙ্গে ছেলের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কেন এমন করল বুঝতে পারছি না।’