সংবাদদাতা, কান্দি: ভরতপুরে তৃণমূল কর্মী খুনে রাজনৈতিক যোগ নেই বলেই মত পুলিসের। ব্যক্তিগত শত্রুতা ও টাকাপয়সা নিয়ে বিরোধই কারণ বলে মত তাদের। এর আগেও নিহতের উপর চারবার হামলা হয়েছে। নিহতের বিরুদ্ধেও একাধিক অপরাধমূলক মামলা রয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, নিহতের নাম ষষ্ঠী ঘোষ (৫৫)। ভরতপুর থানার শেহালই গ্রামে তাঁর বাড়ি। এই খুনের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সাতজনের নামে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভরতপুর থানার পুলিস একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত ন’টা নাগাদ ওই প্রৌঢ় মদনপুর গ্রাম থেকে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। পথে শুনিয়া গ্রামের কাছে কুয়ে নদীর বাঁধে ওঠার সময় খুন হন তিনি। দুষ্কৃতীরা তাঁর ঘাড়ে, মাথায় ও হাতে এলোপাথারি ধারালো অস্ত্রের কোপ মারে। পুলিস দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মৃতের স্ত্রী শ্যামলী ঘোষ বলেন, স্বামী চাষাবাদ নিয়ে থাকে। ট্রাক্টর ও সাবমার্সিবলের টাকা আদায়ের জন্য প্রতিদিন বাইরে যান। এদিন রাতে বাড়ি ফেরার খুন হন উনি। তবে কারা কী কারণে খুন করল তা জানি না।
নিহত প্রৌঢ় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। এলাকায় তাঁর প্রভাবও রয়েছে। তবে খুনের পিছনে রাজনৈতিক আক্রোশের অভিযোগ করতে চায়নি তাঁর পরিবার। তৃণমূলের ভরতপুর ১ ব্লক সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, নিহত প্রৌঢ় আমাদের দল করতেন। তবে খুনের পিছনে রাজনৈতিক যোগ রয়েছে কি না, সেটা পুলিস তদন্ত করে দেখুক।
গ্রামের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নিহতের নামে একাধিক অপরাধমূলক মামলা রয়েছে। একটি খুনের মামলায় অভিযুক্তও তিনি। এরজন্য তাঁকে থানা হাজিরা দিতে হতো। চাষাবাদ পেশা হলেও একসময়ে জমি কেনাবেচার কাজ করতেন। প্রায় ৬০ বিঘে জমি কেনাবেচা নিয়ে গ্রামের একাংশের সঙ্গে তাঁর বিবাদও হয়েছিল। গ্রামের অনেকেই প্রৌঢ়কে ভালো চোখে দেখতেন না। বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, মৃত প্রৌঢ়ের সঙ্গে বিবাদের জেরে অনেক পরিবার গ্রামছাড়া হয়েছে।
মৃতের ছেলে মানব ঘোষ বলেন, গ্রামে একটি সাড়ে সাত বিঘে জমি রয়েছে। ওই জমির ফসলের জন্য গ্রামের মানুষ একসঙ্গে শ্রম দেন। ফসলের লাভের টাকা জমা থাকে গ্রামের মোড়লের কাছে। আবার গ্রামের প্রায় হাজার বিঘে জমির মাঠ পাহাড়ার টাকাও মোড়লের কাছে থাকে। ওই টাকার নয়ছয় করা হয়েছে বলে বাবা মনে করতেন। যে কারণে এবছর গ্রামে রথও করা হয়নি।
প্রায় দেড়মাস আগে বাবা মোড়লের কাছে ওই টাকাকড়ির হিসেব চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওরা বাবাকে বলেছিল পারলে আদায় করবে, আর তারাও বুঝে নেবে। এরপর থেকে মোড়ল ও আমার এক জেঠা গ্রামছাড়া। বাবাকে বুঝে নেওয়ার কথা বলাতেই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে ওদের উপর। খুনের অভিযুক্ত হিসেবে নাম রয়েছে পলাতক গ্রামের মোড়লেরও।
নিহত প্রৌঢ়ের উপর আগেও একাধিকবার হামলা হয়েছে। শেষবার প্রায় ১৫ দিন আগে স্থানীয় শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে তাঁর উপর হামলা হয়। এর আগেও কান্দি ও বহরমপুর শহরেও তার উপর হামলা হয়েছিল। কান্দি এসডিপিও শাশ্রেক আম্বারদার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন।