নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: কথায় আছে, মায়ের কোল শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। সেই কোলের কাছ থেকেই দুগ্ধপোষ্য শিশু কন্যা নিঁখোজ হওয়ায় তোলপাড় বাঁকুড়া। শিশুটির মায়ের দাবি, বুধবার রাত দেড়টায় বুকের দুধ খাইয়ে কোলের কাছে ঘুম পাড়িয়েছিলেন মেয়েটিকে। পাশে তাঁর স্বামী অর্থাৎ শিশুটির বাবাও শুয়েছিলেন। গরমের কারণে বাড়ির দরজা রাতে খোলা ছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুম ভাঙার পর থেকে একরত্তির খোঁজ মিলছে না। বাঁকুড়া সদর থানার বগা গ্রামের ওই ঘটনায় পুলিসও হতবাক। এদিন সকালেই বাঁকুড়া সদর থানার আইসি সহ অন্যান্য আধিকারিকরা গ্রামে যান। পরে বাঁকুড়ার ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি), অতিরিক্ত পুলিস সুপার (সদর) এলাকায় গিয়ে তদন্ত চালিয়েছেন। পুলিস কুকুর নিয়ে গিয়েও তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ শিশুর সন্ধান মেলেনি। অতিরিক্ত পুলিস সুপার সিদ্ধার্থ দোর্জি বলেন, আমরা শিশুটিকে খোঁজার চেষ্টা করছি। শিশুটির বাবাকে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিতে বলা হয়েছে।
শিশুর বাবা প্রশান্ত বাউরি বলেন, আমার তিন ছেলেমেয়ে। বুধবার রাতে প্রচণ্ড গরম ছিল। বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। পনেরো মাস বয়সি ছোট মেয়েকে নিয়ে পাড়ার মনসা মন্দিরের বারান্দায় রাত একটা পর্যন্ত শুয়েছিলাম। পরে সেখান থেকে বাড়ি ফিরি। একই বিছানায় তিন সন্তানকে নিয়ে আমি ও স্ত্রী ঘুমিয়েছিলাম। ভোর ৪টে নাগাদ আমার স্ত্রীর ঘুম ভাঙে। মেয়েকে দেখতে না পেয়ে সে আমাকে ডেকে তোলে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও মেয়ের হদিশ পাইনি।
শিশুর মা বলেন, রাত দেড়টা নাগাদ ছোট মেয়েকে বুকের দুধ পান করিয়ে ঘুম পাড়িয়েছিলাম। আমরা দিনমজুরি করে সংসার চালাই। ফলে চোখ লেগে যাওয়ার পর আর হুঁশ থাকে না। ভোরে ঘুম ভাঙার পর থেকে আর মেয়েকে দেখতে পাইনি। গরমে হাওয়া ঢোকার জন্য বাড়ির দরজা রাতভর খোলা ছিল। রাতে কেউ আমার মেয়েকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছে বলেই অনুমান। মেয়েকে খুঁজে দেওয়ার জন্য পুলিসের কাছে আবেদন করেছি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রশান্ত বা তার পরিবারের সঙ্গে কারও তেমন বিবাদ ছিল না। ফলে শিশুটির ক্ষতি করার জন্য কেউ তুলে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে হয় না। দিনে পাড়া থেকে শিশু হারিয়ে গেলেও না হয় দুষ্কৃতীদের কাজ বলে মনে করা যেত। কিন্তু বাবা, মায়ের পাশ থেকে ঘুমন্ত শিশুর উধাও হয়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা হতবাক। এক পুলিস আধিকারিক বলেন, কুকুর নিয়ে তল্লাশি চালিয়েও আমরা সুবিধা করতে পারিনি। শিশুর বাবা ও মাকে আলাদা আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনও সূত্র পাওয়া যায় কি না, তা আমরা আলোচনা করছি। এটা নিছক নিখোঁজের ঘটনা, নাকি গভীর রাতে অন্য কিছু ঘটেছে, তা জানতে পারলেই রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে। এই বিছানা থেকেই উধাও হয়ে যায় শিশুকন্যা। দেখাচ্ছেন মা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র