সোমবার ও মঙ্গলবার মিলিয়ে ৩৫ টন। বুধবার ৩০ টন। আর লক্ষ্মীবার, বৃহস্পতিতে ৩৫ টন। চারদিনে প্রায় ১০০ টন ইলিশ নিয়ে পাড়ে এলেন মৎস্যজীবীরা। ফলে, মরশুমের মাঝামাঝি ফের ইলিশের গন্ধে ম-ম করছে দীঘার মোহনা। বাড়তি লক্ষ্মীলাভের আশায় মুখে চওড়া হাসি মৎস্যজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের। সেই সঙ্গে আম-বাঙালির পাতেও খানিক কম দামে ইলিশ ওঠার সম্ভাবনা জোরাল হয়েছে।
নিম্নচাপের দুর্যোগ একটু কমতেই দীঘা সহ বিভিন্ন মৎস্যবন্দর ও মৎস্য আহরণকেন্দ্র থেকে মৎস্যশিকারে গিয়েছিলেন মৎস্যজীবীরা। রবিবার রাত থেকে তাঁরা ফিরে আসতে শুরু করেছেন। প্রত্যাশার বাইরে ইলিশ নিয়ে পাড়ে ভিড়েছেন সকলেই। তাই ইলিশে ইলিশে এখন ছয়লাপ দীঘা মোহনার মৎস্য নিলাম কেন্দ্র। গত কয়েকবছর শ্রাবণের শুরুতে এতবেশি উদার হয়নি দীঘার সমুদ্র। মৎস্যজীবীদের জাল ভরে রূপোলি শস্য তুলে দিয়েছে সে। মূলত ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর পূবালী হাওয়া তাঁদের ‘সমুদ্র মন্থন’-এ অনুঘটকের কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই মোহনার নিলাম কেন্দ্র ছিল বেশ জমজমাট। মৎস্যজীবী, ট্রলার, লঞ্চের মালিক, মৎস্য ব্যবসায়ীরা আনন্দে আত্মহারা। মুখে তৃপ্তির হাসি। সবার হাঁকডাকের ধরণও বদলে গিয়েছে। মাছ ধরার মরশুম শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন কুইন্টাল হিসেবে ইলিশ মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ত। তা নিয়ে কেউ কেউ গোঁসাও করতেন। তবে, গত চার-পাঁচদিনে যেভাবে টন টন ইলিশ উঠেছে, তাতে সকলের মন-খুশ। শুধু দীঘা নয়, কাঁথির পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দর, শৌলা মৎস্য আহরণ কেন্দ্রেও ইলিশের ঢল। এদিকে জোগান বেড়ে যাওয়ার ফলে দামও কিছুটা কমেছে। স্বস্তি পাচ্ছেন ভোজনরসিক ইলিশ প্রিয় বাঙালি। দীঘা, কাঁথি, রামনগর, বালিসাই সহ বিভিন্ন লোকাল মাছের বাজার ইলিশে ভরপুর।
দীঘা মোহনা মার্কেট সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি ট্রলার এক থেকে দেড় টন ইলিশ শিকার করেছে। আর তাতেই এত পরিমাণ ইলিশ মিলেছে। এখনও সমুদ্রে রয়েছে বহু ট্রলার-লঞ্চ। সেগুলি ফিরলে ইলিশের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন মৎস্যজীবী এবং মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
এদিন দীঘা মোহনার নিলাম কেন্দ্রের পাইকারি বাজারে ৫০০-৭০০ গ্রাম ইলিশের দাম ছিল ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি। ৮০০-এক কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১০০০-১১০০ টাকা কেজি দরে। ১ কেজি ১০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দর উঠেছে ১৪০০-১৫০০ টাকা। দীঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘এই ক’দিনে ভালোই ইলিশ উঠছে মৎস্যজীবীদের জালে। গত কয়েকবছরে এই সময়ে আশানুরূপ ইলিশ ওঠেনি। এবার ছবিটা অন্যরকম। শ্রাবণের ঝিরঝিরে বৃষ্টির সঙ্গে পুবালী বাতাসের দাপট অব্যাহত থাকলে আগামী ক’দিন ইলিশের আরও উঠবে বলেই আমরা মনে করছি। দামও সাধারণ মানুষের একেবারে নাগালের মধ্যে আসবে।’
এদিন বালিসাই বাজারে কথা হচ্ছিল সুব্রত মহাপাত্র নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। অন্যান্য মাছের পাশাপাশি ইলিশও কিনেছেন। বলছিলেন, ‘আজ, ইলিশ কেনার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু বাজারে প্রচুর প্রমাণ সাইজের ইলিশ উঠেছে। দামটাও বেশ নাগালের মধ্যে। তাই ৮০০ গ্রাম ওজনের আশপাশে একজোড়া ইলিশ কিনেছি।’ নিজস্ব চিত্র