• স্কুলছাত্রীদের ‘ব্যাড টাচ’! কাঠগড়ায় ভূগোল শিক্ষক
    এই সময় | ২৫ জুলাই ২০২৫
  • এই সময়, আলিপুরদুয়ার: বৃহস্পতিবার সকালে বেশ জমে উঠেছিল বাজার। এমন সময়ে পুলিশের হানা। সবাই একটু অবাকই হয়েছিলেন। এই ভরা বাজার থেকে একজনকে পাকড়াও করে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি স্থানীয় স্কুলের ভূগোল শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ।

    অভিভাবকদের দাবি, দিনের পর দিন এই শিক্ষকের ‘ব্যাড টাচ’–এর শিকার হতে হচ্ছিল অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের। বিষয়টি গোড়ায় সহ্য করে নিলেও ক্লাস চলাকালীন চরম অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে সহ্যের বাঁধ ভাঙে তাদের।

    কয়েকজন অভিভাবকদের কাছে এ সব অভিজ্ঞতা খুলে বলতে শুরু করে। স্বাভাবিক ভাবেই ওই শিক্ষককের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন জাগে বাবা–মায়েদের মনে। তাঁদের অভিযোগ, এ নিয়ে একাধিকবার স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক অভিযোগ জানালেও বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

    অবশেষে সিডব্লুউসি–র হস্তক্ষেপে আলিপুরদুয়ারের শামুকতলা থানা এলাকার একটি সরকার পোষিত স্কুলের শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

    অভিভাবক ও পড়ুয়াদের অভিযোগ, কীর্তিমান ওই শিক্ষক মাস চারেক ধরে কথায় কথায় ‘ব্যাড টাচ’–এ প্রবৃত্ত হতেন। দিনে দিনে শালীনতার মাত্রা অতিক্রম করছিলেন এই ভূগোলের শিক্ষক।

    এমনকী প্র্যাক্টিকাল ক্লাসের অছিলায় কয়েকজন পড়ুয়ার সঙ্গে তাঁর আচরণ যৌন নির্যাতনের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। বিষয়টি মাত্রা ছাড়াতে শুরু করলে স্কুল কর্তৃপক্ষের উপরে আর ভরসা রাখতে পারেননি অভিভাবকরা।

    তাঁরা বিষয়টি লিখিত আকারে সিডব্লিউসি–র কাছে জানান। গুরুতর অভিযোগ পেয়ে জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশীর দ্বারস্থ হন সিডব্লিউসি কর্তারা।

    পুলিশের পরামর্শ মেনে কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট স্কুলে গিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেন শামুকতলা থানায়। এর পরেই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে পকসো ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে পুলিশ।

    বৃহস্পতিবার সকালে শামুকতলার ভরা বাজার থেকে অভিযুক্ত ভূগোলের শিক্ষক ভাস্কর পালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই শিক্ষক বিবাহিত এবং তিনি শামুকতলা শহরেরই বাসিন্দা। বাজারের মধ্যে ওই শিক্ষককে পুলিশ গ্রেপ্তার করায় আলোড়ন তৈরি হয়েছে শামুকতলায়।

    যদিও এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে স্কুল পরিচালন কমিটির কর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবকের অভিযোগ, ‘শালীনতার মাত্রা ছাড়াচ্ছিলেন ওই শিক্ষক।

    এমনকী ছাত্রীদের মুখ না খোলার জন্য হুমকি পর্যন্ত দিতেন। প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া অথবা ফেল করিয়ে দেওয়ার মতো শাসানিও জুটত তাঁর কাছ থেকে। যদিও স্কুলকে সব কিছু জানানোর পরেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। পড়ুয়াদের সম্ভ্রম বাঁচাতে আমরা বাধ্য হয়ে সিডব্লিউসি–র দ্বারস্থ হয়েছি।’

    জেলা সিডব্লিউসি চেয়ারম্যান অসীম বসু বলেন, ‘পুরো বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। তাই মন্তব্য করব না।’ জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশী বলেন, ‘একটি সুনির্দিষ্ট তদন্ত রিপোর্ট পেয়ে আমরা অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি।’

  • Link to this news (এই সময়)