• হাজতে মৃত্যু মেনে ক্ষতিপূরণ, তবে সাজা হলো না কারও!
    এই সময় | ২৫ জুলাই ২০২৫
  • এই সময়: একুশ বছর আগের হেফাজতে মৃত্যুর একটি ঘটনায় ৬ পুলিশকর্মী-সহ ১০ অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার বেকসুর খালাস ঘোষণা করলেন নগর দায়রা আদালতের সিবিআই ফার্স্ট কোর্টের বিচারক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়।

    তবে হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি মেনে মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। প্রাথমিক ভাবে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করে লিগাল সার্ভিসেস অথরিটিকে চূড়ান্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়েছেন বিচারক।

    কাউকে দোষী সাব্যস্ত না-করতে পারার কারণ হিসেবে অকাট্য প্রমাণের কিছু খামতির কথা রায়ে উল্লেখ করেছেন বিচারক। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনায় অন্য মত আসতে পারে।

    তদন্তকারী সিবিআই এবং মৃতের পরিজন-দু'তরফের পক্ষেই ছ'মাসের মধ্যে হাইকোর্টে আপিলের সুযোগ থাকছে। এই ছ'মাসের জন্যে অভিযুক্তদের ৫ হাজার টাকা করে ব্যক্তিগত বন্ড জমা করতে হয়েছে।

    অভিযোগ, ২০০৪-এর ৬ জুলাই মধ্যরাত পেরিয়ে দুটোর সময়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার বাড়ি থেকে খড়্গপুর লোকাল থানার পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল সৌমেন্দু মণ্ডল ওরফে ঝুমা নামে বছর বত্রিশের যুবককে।

    মা, স্ত্রী, দুই বাচ্চা মেয়ের সামনে দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। অ্যারেস্ট মেমো দেওয়া হয়নি। গোটা ৭ তারিখ আদালতে না-হাজির করিয়ে বেআইনি ভাবে আটক রাখা হয়।

    পরে পুলিশ দেখায়, সৌমেন্দুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডাকাতির মামলায়। যদিও সে মামলার এফআইএর-এ কোথাও নাম ছিল না কুয়ো তৈরির পেশায় যুক্ত ওই যুবকের।

    অভিযোগ, ৭ তারিখ সন্ধ্যায় খড়্গপুর লোকাল থানায় এক দফা জিজ্ঞাসাবাদের পরে রাতে এসডিপিও জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়, ওসি অপূর্ব নাগের নেতৃত্বে পুলিশ সৌমেন্দুকে নিয়ে বেরোয়। রাত ১২টার কিছু পরে পুলিশ-পার্টি তাঁকে নিয়ে থানায় ফেরে।

    পুলিশের দাবি, এর মধ্যে সৌমেন্দু পুলিশের জিপ থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টা করে আহত হন। তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। তবে সরকারি হাসপাতালে নয়, লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরোনো এক হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসকের নার্সিংহোমে। রাত ৩টের পরে

    সৌমেন্দুকে খড়্গপুর হাসপাতালে পাঠানো হলে মৃত ঘোষণা করা হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, শরীরে ২২টি আঘাত রয়েছে এবং আঘাতের ধরন ‘আন্টি মর্টেম অ্যান্ড হোমিসাইডাল’। দেহ দাহ না-করে বাড়ির পাশে সমাহিত করে রাখে পরিবার।

    পুলিশের অত্যাচারেই মৃত্যু বলে খড়্গপুর টাউন থানায় অভিযোগ রুজু করেন সৌমেন্দুর স্ত্রী প্রতিমা। কিন্তু পুলিশ যে তদন্তে আগ্রহী নয়, স্পষ্ট হয় অচিরেই। সৌমেন্দুর মা বিভা মণ্ডল সিবিআই তদন্ত চেয়ে আবেদন করেন কলকাতা হাইকোর্টে।

    ২০০৫-এর ২১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। জয়ন্ত, অপূর্ব-সহ ৯ পুলিশকর্মী ও অন্য ৪ জনের বিরুদ্ধে দু'দফায় চার্জশিট দেয় সিবিআই।

    পুলিশের জিপ থেকে লাফিয়ে সৌমেন্দুর পালানোর চেষ্টার তত্ত্ব খরিজ করা হয় চার্জশিটে। হেফাজতে অত্যাচারেই মৃত্যু বলে জানানো হয়। ২০১১-র জানুয়ারিতে মেদিনীপুর জেলা-দায়রা আদালতে বিচার শুরু হলেও অভিযুক্তরা নানা ভাবে প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

    বিচার স্থানান্তরিত হয় কলকাতায়। ৬৯ জন সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে অভিযুক্ত তিন পুলিশকর্মী মারা যান। অবশেষে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা হলো। সৌমেন্দুর দাদারা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের সাজার দাবিতে হাইকোর্টে আপিল করবেন তাঁরা।

  • Link to this news (এই সময়)