এই সময়: বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে, ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’। সেই প্রবাদকেই যেন সত্যি করতে চাইছে কসবার সেই ল কলেজ। গত ২৫ জুন ল কলেজের ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
সেই ঘটনার পরে এখন প্রাক্তন সেনা অফিসারদের নিয়োগ করে কলেজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার ওই কলেজে ফের পরিচালন সমিতির বৈঠক বসে।
এই পরিচালন সমিতির বৈধতা নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কলেজের নিরাপত্তায় অন্তত দু’জন প্রাক্তন সেনাকে নিয়োগ করা হবে। বাড়ানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যাও।
এর আগে কলকাতা হাইকোর্টে গিয়ে ওই ল কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন, ক্যাম্পাসে পুলিশ পিকেট বসাতে হবে। কিন্তু আদালত তা নাকচ করে জানিয়ে দেয়, শিক্ষাঙ্গনে পুলিশ পিকেট পড়াশোনার পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তার পরেই এ দিন ল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রাক্তন সেনাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে আনার প্রস্তাব আনেন। তা পাশও হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, গণধর্ষণের ঘটনায় ধৃত টিএমসিপি নেতা ও ওই কলেজের প্রাক্তন অস্থায়ী কর্মী মনোজিৎ মিশ্রদের দাপট এতখানি ছিল যে নিরাপত্তারক্ষীরাও তাদের কিছু বলতে পারত না।
২৫ জুনের ঘটনাতেও সব জেনে চুপ করে থাকার কারণে নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আগে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে এবং মনোজিৎ–দের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরে যদি সঠিক ব্যবস্থা নিত পরিচালন সমিতি, তা হলে কি ওই ঘটনা ঘটত?
ইতিমধ্যেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মনোজিৎ–দের বিরুদ্ধে একাধিক মারাত্মক অভিযোগ কলেজের পরিচালন সমিতির কাছে এলেও তারা তা ইচ্ছে করেই দিনের পর দিন চেপে গিয়েছিল।
মনোজিৎ–সহ তৃণমূলের সুপারিশে ওই কলেজে একের পর এক অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ হয়েছে। কী ভাবে সেই নিয়োগ হলো? কোনও অফিশিয়াল প্রসিডিয়োর ফলো করা হয়েছিল কি না, পদের জন্যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল কি না, উচ্চশিক্ষা দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়োগগুলির বিষয়ে জানত কি না— এই সব প্রশ্নে ইতিমধ্যে আরটিআই করা হয়েছে।
এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সেই আরটিআই–এর জবাব দেওয়া হবে। তবে পরিচালন সমিতির কিছু বাইরের প্রতিনিধি প্রস্তাব দেন, এ বিষয়ে যেন কেউ মিডিয়া বা প্রকাশ্যে মুখ না খোলেন। তা নিয়ে তাঁরা অনেকের তীব্র বাধার মুখেও পড়েন। দীর্ঘক্ষণ বাদানুবাদ চলে বলে সূত্রের খবর।