এই সময়: বাংলার বাতাস নিয়ে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রকাশিত রিপোর্ট উদ্বেগ বাড়াল বিশেষজ্ঞদের। ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলার উত্তর থেকে দক্ষিণ, সব প্রান্তেই ফুসফুসে ঢুকছে বাতাসে ভাসমান বিপজ্জনক ধূলিকণা।
আয়তনের বিচারে বাতাসে ভাসমান দু’ধরনের কণার (পিএম২.৫ এবং পিএম১০) পরিমাণই বার্ষিক গড় নিরাপদ সীমার অনেকটা উপরে।
বাতাস নির্মল কি না, অনেকখানি এলাকায় ভাসমান নানা কণার উপস্থিতি শ্বাস–প্রশ্বাসের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক কি না — এ সব নিয়েই প্রতিটি রাজ্য থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’ (সিআরইএ)।
কেন্দ্রীয় পর্ষদের ‘ন্যাশনাল অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড বা এনএএকিউএস’ অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটারে পিএম১০–এর সর্বোচ্চ পরিমাণ ৬০ মাইক্রোগ্রাম এবং পিএম২.৫ সর্বোচ্চ ৪০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত থাকতে পারে। বাতাসে ভাসমান যে কণাগুলির মাপ ২.৫ মাইক্রোমিটার, তারাই পিএম২.৫ এবং যাদের মাপ ১০ মাইক্রোমিটার, তারাই পিএম১০।
পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানান, শীতকালে কণাগুলি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলেও গ্রীষ্ম ও বর্ষায় তা অনেকটা কমে যায়। কিন্তু এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছ’মাসে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের শহরে ভাসমান কণার পরিমাণ অনেকখানি বেশি থেকেছে।
কলকাতায় পিএম১০–এর পরিমাণ ঘনমিটারে ৮৮ মাইক্রোগ্রাম, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেশি। আর ঘনমিটারে পিএম২.৫–এর পরিমাণ ৪৪ মাইক্রোগ্রাম, সেটাও স্বাভাবিকের উপরে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, পিএম২.৫–এর নিরিখে রাজ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের। সেখানে প্রতি ঘনমিটারে পিএম২.৫ রয়েছে ৬০ মাইক্রোগ্রাম, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় দেড় গুণ বেশি।
পিএম১০–ও সবচেয়ে বেশি পশ্চিম বর্ধমানেরই দুর্গাপুরে, ঘনমিটারে ১৪৬ মাইক্রোগ্রাম। রাজ্যের মধ্যে একমাত্র হলদিয়ায় পিএম২.৫–এর পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম। বাকি সর্বত্র দু’ধরনের কণাই বিপদসীমার উপরে।
সিআরইএ–র অ্যানালিস্ট মনোজ কুমার বলেন, ‘এই দু’ধরনের কণা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় দীর্ঘ দিন ফুসফুসে ঢোকে, তা হলে হৃদ্রোগ ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা অবশ্যম্ভাবী।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, পিএম২.৫–এর কোনও নিরাপদ মাত্রা হয় না। ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম পিএম২.৫–এর দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শেও শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়।’