কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সেন্ট পলস চার্চ, সেন্ট জেমস চার্চ, ধর্মতলা চত্বরের বেশ কয়েকটি পুরোনো বাড়িকে আলো দিয়ে সাজানোর কাজ বছরখানেক আগেই শেষ করেছে ‘দ্য ক্যালকাটা রেস্টোরার্স’।
এই সংগঠন বেছে নিয়েছিল সেই সব প্রাচীন ও ঐতিহ্যময় সৌধগুলি, যেগুলি কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মহানগরের চৌহদ্দির মধ্যে প্রায় ৮৯টি এমন বাড়িকে আলো দিয়ে সাজানোর পরে এ বার জেলাতেও কাজ শুরু করল এই সংগঠন।
কিছুদিন আগে দার্জিলিংয়ের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ় চার্চকে আলোয় সাজানোর পরে তারা বেছে নিয়েছিল হুগলির ইমামবাড়াকে। সেই কাজ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার।
হুগলি নদীর ধারে তৈরি ইমামবাড়া দেখতে বছরভরই ভিড় লেগে থাকে। প্রায় ৪৬ মিটার উঁচু জোড়া মিনার এবং তার মাঝের ক্লক টাওয়ার আগ্রহীদের কাছে বরাবরই আকর্ষণের বিষয়।
লন্ডনের বিখ্যাত বিগ বেন ঘড়িটি যে সংস্থার তৈরি, সেই মেসার্স ব্ল্যাক অ্যান্ড হারে কোম্পানি ১৮৫২ সালে প্রায় ১২ হাজার টাকায় এই ঘড়িটি তৈরি করে দিয়েছিল। সপ্তাহে দু’বার ঘড়িটিতে দম দিতে হয়। তবে, দম দেওয়ার চাবিটির ওজন অন্তত ২০ কেজি হওয়ায় দম দিতে দু’জন লাগে।
১৮৪১–এ নির্মাণ শুরু এবং ১৮৬১–তে শেষ — ১৬৪ বছরের পুরোনো এই ইমামবাড়া দেখতে এতদিন দিনের আলোতেই ভিড় করতেন আগ্রহীরা। এ বার রাতেও ইমামবাড়ার সৌন্দর্য মুগ্ধ করতে চলেছে সবাইকে। সৌজন্যে ‘দ্য ক্যালকাটা রেস্টোরার্স’।
কলকাতার ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত সৌধগুলি যাতে সাধারণ মানুষের নজর এড়িয়ে না যায়, সে লক্ষ্যেই অনেকে মিলে তৈরি করেছিলেন ‘দ্য ক্যালকাটা রেস্টোরার্স’ নামের সংগঠনটি।
সংগঠনের তরফে মুদার পাথেরিয়া ‘এই সময়’–কে বলেন, ‘কলকাতায় ৮৯টি সৌধকে আমরা বিশেষ ভাবে আলোকিত করেছি। আলোগুলি এমন ভাবে বসানো হয়েছে যে সৌধগুলিতে আলো–ছায়ার খেলা মানুষের চোখ টানবে।
সেই কাজে সফল হওয়ায় আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এ বার জেলাতেও ঐতিহ্যশালী সৌধগুলিকে এমন ভাবে আলোয় সাজানোর কাজে হাত দিয়েছি।’ সংগঠন জানিয়েছে, মাত্র ছ’দিনে বিশাল ইমামবাড়া আলোয় সাজানো হয়েছে।
হুগলি নদীর ধারে আলোকিত ইমামবাড়া এই অঞ্চলে রাতের পর্যটনকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যে সময়ে হুগলি নদীর পাশে ইমামবাড়া তৈরির কাজ চলছিল, প্রায় সেই সময়েই দার্জিলিংয়ে চলেছিল সেন্ট অ্যান্ড্রুজ চার্চ তৈরির কাজও। ১৮৪৩ সালে তৈরি এই চার্চকেও আলোয় সাজিয়েছে দ্য ক্যালকাটা রেস্টোরার্স।
সংগঠন জানিয়েছে, কালিম্পংয়ে গ্রাহাম হোমের গির্জাটিকেও এমন ভাবে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ইছাপুরের ‘পরীবাড়ি’–র নামও রয়েছে তালিকায়। বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী আলোর ব্যবস্থা করছে দ্য ক্যালকাটা রেস্টোরার্স, আর সৌধগুলির রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থাই থাকছে বিদ্যুতের বিল মেটানোর দায়িত্বে।