সম্যক খান, মেদিনীপুর: দীর্ঘ ১৫ বছর। অবশেষে বেলামুক্তি। সমাজ বদলানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে রক্তক্ষয়ী হিংসার পথ ধরে জেলবন্দি। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ থেকে প্রতিবেশী রাজ্যে পুলিশ খুন। একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনায় জেলবন্দি ছিলেন মাওবাদী নেত্রী শোভা মুণ্ডা ওরফে চন্দনা সিং। বৃহস্পতিবার তিনি ছাড়া পেলেন মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে।
বেলপাহাড়ির মেয়ে শোভা ওরফে চন্দনাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হাজির হয়েছিলেন তাঁর দাদা-বউদি তারক সিং ও ছবি সিং। জেল থেকে বের হয়ে শোভা জানান, যে মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে সেই ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন না। আগামী দিনে কী করবেন, সেই প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর মেলেনি। তবে তাঁর দাদা বলেন, “১২ বছর বয়সে ঘর ছেড়েছিল বোন। আজ ওকে ফিরে পেয়ে আমরা খুশি। আনন্দের দিন। ঘর ছাড়ার কয়েক বছর পর একদিন জানতে পারি, ঝাড়খণ্ডপুলিশ বোনকে গ্রেপ্তার করেছে।” এদিন জেলের সামনে হাজির ছিল এপিডিআরের টিমও। এপিডিআরের রাজ্য নেত্রী জয়শ্রী সরকার বলেছেন, সমাজ পাল্টানোর স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন আদিবাসী ওই তরুণী। বিচারব্যবস্থার গড়িমসিতে তাঁর জীবনের মূল্যবান ১৫ বছর নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
২০১০ সালে ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলায় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের মামলায় গ্রেপ্তার হন শোভা ওরফে চন্দনা। তাঁর বাড়ির নাম ছিল চন্দনা। কিন্তু মাওবাদী দলে যোগ দেওয়ার পর নাম হয়ে যায় শোভা। মাওবাদী স্কোয়াডে থাকার সময়ই বিয়ে হয়েছিল রাজেশ মুণ্ডার সঙ্গে। রাজেশ এখন মুর্শিদাবাদ জেলে বন্দি। তিনি সেখান থেকেই নিয়ম মেনে মাঝেমাঝে কথা বলতেন স্ত্রীর সঙ্গে। রাজেশের বাড়ি ঘাটশিলা।
ঝাড়গ্রামে প্রায় ছয়টি মামলা আছে শোভার বিরুদ্ধে। যদিও সবকটিতেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ঘাটশিলা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ মামলাতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় শোভার। বিভিন্ন জেল ঘোরার পর তার ঠাঁই হয় মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে। কারাদণ্ড ভোগ করে যাচ্ছিলেন তিনি।
এরই মধ্যে তার মুক্তির জন্য রাঁচি হাই কোর্টে আপিল করে এপিডিআর। ২০২২ সালে সেই আপিলের শুনানি শেষও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিন বছর রায় স্থগিত ছিল। এপিডিআর নেত্রী জয়শ্রীদেবী বলেছেন, শোভার বিচারে চরম দেরি হয়েছে। তিন বছর রায়দান করা হয়নি। অবশেষে সম্প্রতি রাঁচি হাই কোর্ট শোভাকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেয়। এদিন অবশ্য তার জেলমুক্তি নিয়েও সমস্যা দেখা দেয়।
শোভার বাড়ি বেলপাহাড়ির মাজুগেড়া গ্রামে। জানা গিয়েছে যে রাঁচি উচ্চ আদালতের নির্দেশনামায় গ্রামের নামের সঙ্গে জেলের রেকর্ডে থাকা নামের বানানের অমিল আছে। যার কারণে এদিন সকালে জেলমুক্তির কথা থাকলেও তা হয়নি। মেদিনীপুর থেকে ফের ওই নাম সংশোধন করতে ঝাড়গ্রাম আদালতে যান তাঁরা। ফিরে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তারপর জেল থেকে বের হন তিনি।