এই সময়, শ্রীরামপুর: চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ও রোগীমৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে।অভিযোগ, বৃহস্পতিবার হাসপাতালের আইসিইউতে ঢুকে অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা চলাকালীন চিকিৎসকদের উপরে চড়াও হয় মৃতের আত্মীয়রা।
আইসিইউ–তে চিকিৎসার সরঞ্জাম ভাঙচুর চালনোর অভিযোগ উঠেছে রোগীর পরিবার ও আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। শ্রমজীবী হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলে ফেসবুক লাইভ করেন মৃতের পরিবারিক বন্ধু তথা বিজেপি নেতা হরি মিশ্র।
সমাজ মাধ্যমে সেই ছবি ভাইরাল হতেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। গোটা ঘটনায় শ্রীরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শ্রমজীবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাল্টা রোগীর আত্মীয়রাও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে মৃতের ময়নাতদন্ত করান।
চলতি মাসের ২০ তারিখ শ্বাসকষ্ট নিয়ে শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শ্রীরামপুর প্রভাসনগর এলাকার বাসিন্দা বিমলা দেবীকে (৭২)। এ দিন সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ রোগীর আত্মীয়রা আইসিইউ–তে হাজির হয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তুমুল বচসা জুড়ে দেন বলে অভিযোগ।
পরিবারের দাবি, বুধবার হাসপাতালের পক্ষ থেকে রোগী ভালো আছে বলে জানানো হয়। কিন্তু এ দিন সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হয় বিমলা দেবীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে, তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হবে। পরিবারের লোকের অভিযোগ, তাঁরা গিয়ে দেখেন রোগী আইসিইউতে গেলে চিকিৎসক জানান রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এ কথা শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর বাড়ির লোকজন। ডাক্তারদের উপরে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার সেই ভিডিয়ো ফেসবুকে লাইভে দেখান রোগীর সঙ্গে আসা বিজেপি নেতা হরি মিশ্র। ঘটনাস্থলে আসে শ্রীরামপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। দেহ নিতে অস্বীকার করেন পরিবারের লোকজন।
মৃতার বৌমা প্রতিমা সিং বলেন, ‘রবিবার শাশুড়িকে ভর্তি করি শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে। চিকিৎসার গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে।’ হরি মিশ্র বলেন, ‘আমার বন্ধুর মাকে চার দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন দু-তিন দিন অবজ়ারভেশনে রেখে ছেড়ে দেবেন। আজকে সকাল আটটার সময় জানতে পারি পেশেন্টের অবস্থা খুব খারাপ, তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হচ্ছে।’
শ্রমজীবী হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা যে খারাপ সেটা রোগীর পরিবারকে জানানো হয়েছিল। আইসিউতে ভর্তি করার সময় রোগীর পরিবারকে বলা হয়েছিল তাঁকে যে কোনও সময় ভেন্টিলেশনে দিতে হতে পারে।
আপনারা মনে করলে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন। এ দিন সকালে এক নেতা এসে আইসিইউ–তে ঢুকে ভাঙচুর চালায় এবং চিকিৎসকদের গালিগালাজ করে।’
হাসপাতালে চিকিৎসক অনীক জানা বলেন, ‘পরিবারের লোককে জানিয়েই ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। রোগীর মৃত্যু হলে বাড়ির লোকজন আচমকা হাসপাতালের কর্মী ও ডাক্তারদের উপরে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় ও গালিগালাজ করে।’