জটিল অস্ত্রোপচারে কিশোরের প্রাণ বাঁচাল জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৫ জুলাই ২০২৫
নিছক খেলাধুলা করতে গিয়েই ঘটে গিয়েছিল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বাঁশ ঢুকে যায় ১৪ বছরের এক কিশোরের শরীরে, গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় একাধিক অঙ্গ। তবে চিকিৎসকদের তৎপরতা এবং দক্ষতার জোরে শেষমেশ প্রাণে বাঁচল ময়নাগুড়ির পেটকাটি এলাকার বাসিন্দা অমিত সাহা।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল অমিত। মাঠে উইকেট হিসেবে ব্যবহার করা ধারালো বাঁশটি খেলার মাঝেই হঠাৎ পেটে ঢুকে যায় তার। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় রক্তপাত। তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে। সেই সময় তার রক্তচাপ ছিল বিপজ্জনকভাবে কম, হিমোগ্লোবিন মাত্র ৬.৬। শরীরের মধ্যে প্রবেশ করা বাঁশটি ক্ষতিগ্রস্ত করে লিভার, কিডনি ও গুরুত্বপূর্ণ শিরা ইনফেরিওর ভেনাক্যাভা।
পরিস্থিতি এতটাই সংকটজনক হয়ে ওঠে যে, রোগীকে অন্যত্র রেফার করার সুযোগ ছিল না। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে অস্ত্রোপচারে নামেন জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ আশিসকুমার সাহার নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্যের এক বিশেষজ্ঞ দল। রাত ৯টা নাগাদ শুরু হওয়া এই জটিল অস্ত্রোপচার চলে টানা দুই ঘণ্টারও বেশি সময়। সফলভাবে শরীর থেকে বের করে আনা হয় সাড়ে তিন ফুট লম্বা বাঁশের খণ্ড।
ডাঃ আশিসকুমার সাহা বলেন, ‘অমিতের ব্লাড গ্রুপ ছিল নেগেটিভ, যা সাধারণত সংগ্রহ করা কঠিন। এমএসভিপি কল্যাণ খাঁ নিজে উদ্যোগ নিয়ে সেই রক্ত সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন। মাত্র এক ইউনিট রক্ত পেয়েই আমরা অস্ত্রোপচার শুরু করি। কয়েক মিনিট দেরি হলেও প্রাণ সংশয় হতে পারত।’
অস্ত্রোপচারের পর বর্তমানে অমিত ভর্তি রয়েছে সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের সিসিইউ-তে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছেলেটির অবস্থা স্থিতিশীল হলেও পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি কল্যাণ খাঁ বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের দক্ষতা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রমাণ করেছেন, সংকটের মুহূর্তেও আমরা প্রস্তুত। এই অপারেশন আমাদের সবার কাছেই এক গর্বের মুহূর্ত।’