অর্ণব আইচ: ডিজিটাল গ্রেপ্তারির ভয় দেখানো সাইবার জালিয়াতদের ‘হাতিয়ার’ বিভিন্ন কুরিয়র সংস্থার একাংশ কর্মী। কুরিয়র সংস্থার ওই কর্মীরাই কুরিয়রের জন্য আসা প্যাকেটের ছবি তুলে পাঠাচ্ছে সাইবার জালিয়াতদের। আর তার উপর ভরসা করে সাইবার জালিয়াতরা ডিজিটাল গ্রেপ্তারির ভয় দেখিয়ে ফোন করছে কলকাতা-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দাদের। সাইবার জালিয়াতির তদন্ত করতে গিয়ে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে পুলিশের হাতে। তারই ভিত্তিতে কুরিয়র সংস্থাগুলিকে সতর্ক করছে পুলিশ।
এছাড়াও পুলিশের মতে, ফোন করার সময় সাধারণত প্রবীণদের বেছে নেয় জালিয়াতরা। একই সঙ্গে দেখা যায়, ডিজিটাল গ্রেপ্তারির ভয় দেখিয়ে সাইবার জালিয়াতির ক্ষেত্রে অনেক সময়ই বিপুল টাকা তুলে নেওয়া হয়। এমনকী, দেখা গিয়েছে, কয়েক কোটি টাকাও একসঙ্গে উধাও হয়ে গিয়েছে প্রবীণদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে। ব্যাঙ্কের কর্মীদের একটি অংশের কাছ থেকে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য সাইবার জালিয়াতদের ‘পাচার’ করছে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল গ্রেপ্তারির নামে সাইবার জালিয়াতির জন্য প্রতারণার শিকারদের জালিয়াতরা নিজেদের সিবিআই, মুম্বই পুলিশ, দিল্লি পুলিশ বা শুল্ক দফতরের আধিকারিক বলে পরিচয় দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জালিয়াতরা বলে, তাঁদের নামে কুরিয়র এসেছে। কুরিয়রে তাঁর ঠিকানা রয়েছে। সেই ঠিকানাও জানানো হয় সেই ব্যক্তিকে। হোয়াটস অ্যাপে সিবিআই বা পুলিশের লোগো বসিয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়। ওই হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে কুরিয়রের প্যাকেটের ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেই ব্যক্তিকে। সিবিআই বা পুলিশের নাম করে এমনও জানানো হয় যে, স্ক্যানারের মাধ্যমে জানা গিয়েছে যে, ওই প্যাকেটে করে অন্য বস্তুর আড়ালে মারাত্মক মাদক পাচার করা হচ্ছে। মাদক মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তাঁকে আপাতত ডিজিটাল গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি যে কোথাও না বের হন। পরে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মোটা জরিমানা দিয়ে তিনি মামলা থেকে রেহাই পেতে পারেন।
পুলিশ তদন্ত করে জেনেছে, অভিযোগকারী ব্যক্তি জানতেন যে, তাঁর নামে কুরিয়রে তাঁর জিনিস আসছে। ফলে সাইবার জালিয়াতদের পাঠানো কুরিয়রের প্যাকেটে তাঁর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর দেখে প্রথমে হতবাক ও পরে ঘাবড়ে যান ওই ব্যক্তিরা। তাই ডিজিটাল গ্রেপ্তারির ব্যাপারটি বিশ্বাসও করে ফেলেন। তাই ‘জরিমানা’র বিপুল টাকা দিয়ে ‘মামলা’ থেকে রেহাই পেতে চান। এই ক্ষেত্রে তদন্ত করে পুলিশ জেনেছে যে, এই সাইবার জালিয়াতরা রীতিমতো নিজেদের এজেন্ট মারফত কুরিয়র সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। কুরিয়র সংস্থার কর্মীদের একটি অংশকে টাকার লোভ দেখানো হয়। টাকার বিনিময়ে ওই কর্মীরা প্যাকেটের ছবি তুলে সাইবার জালিয়াতদের এজেন্টদের পাঠায়। এজেন্ট মারফত ওই প্যাকেটের ছবি পৌঁছে যায় জালিয়াতদের হাতে, যা জালিয়াতির মূল হাতিয়ার হয়ে ওঠে। যদিও পুলিশ দেখেছে যে, মূলত মুম্বই ও দিল্লির কুরিয়র সংস্থাগুলির কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। তাই ওই শহরগুলির পুলিশের নাম নিয়েও তারা জালিয়াতি করে।