এই সময়: ইদানীং বাংলার বিজেপি নেতাদের মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির থেকেও বেশি শোনা যাচ্ছে ‘জয় মা দুর্গা’! এমনকী, গত শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে জনসভা করতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাষণ শুরু করেছিলেন ‘জয় মা দুর্গা’ ধ্বনি তুলে।
শুধু দুর্গার নামে স্লোগান তোলাই নয়, দুর্গাপুজোর আড়ম্বরেও এ বার তাক লাগাতে চাইছে বঙ্গ–বিজেপির একাংশ। তাদের যুক্তি, এ বছর দুর্গাপুজোয় এমন কিছু করতে হবে যাতে আর কেউ বলতে না পারে, বিজেপি বাঙালি বিদ্বেষী।
২০২১ বিধানসভা ভোটের আগের বছর ২০২০ সালে দুর্গাপুজোকে হাতিয়ার করে বিজেপি বাঙালির পার্টি হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল। সে বার সল্টলেকে ধুমধাম করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল বিজেপির তরফে।
প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি সেই পুজো উদ্বোধনও করেছিলেন। কিন্তু গোটা রাজ্যে আর কোনও বারোয়ারি দুর্গাপুজো কমিটির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে পারেনি গেরুয়া শিবির। ফলে ২১–এর বিধানসভা ভোটের আগে যে ন্যারেটিভ তৈরির জন্য বিজেপি নিজস্ব উদ্যোগে দুর্গাপুজো করেছিল তা কোনও কাজে আসেনি। অর্থাৎ, ভোটবাক্সে তার কোনও প্রতিফলন অন্তত দেখা যায়নি।
এ বার বঙ্গ–রাজনীতিতে বাংলা ও বাঙালি ইস্যু অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। গত সোমবার ধর্মতলায় ২১ জুলাই মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, ২৬–এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি তাঁদের কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্ব পাবে।
ফলে বিজেপিও চাইছে, উত্তর ভারতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি আড়ালে রেখে আরও বেশি করে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়াতে। সেই লক্ষ্যে এ বছর দুর্গাপুজোর সঙ্গে বিজেপি নেতা–কর্মীরা কী ভাবে সম্পৃক্ত হতে পারেন, তা নিয়ে পদ্ম ব্রিগেডে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এমনকী, সরাসরি বিজেপির ব্যানারে না হলেও স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে একটি করে দুর্গাপুজো করার প্রস্তাব গিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে।
প্রতি বছরই বিজেপির কোনও না কোনও কেন্দ্রীয় নেতা সজল ঘোষের সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো উদ্বোধন করতে আসেন। বিজেপির অনেকেই চাইছেন, এ বছর পুজোর চারটে দিন দলের অন্তত কিছু শীর্ষ নেতা কলকাতায় কাটান।
এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘কলকাতার বড় পুজোগুলি সবই তৃণমূল নেতাদের দখলে। আমাদের পক্ষে সেখানে নাক গলানো মুশকিল। কিন্তু কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে বিজেপি বই–এর স্টল দেয়। সেখানে যদি কেন্দ্রীয় নেতারা কিছুটা সময় কাটান, তা হলে বাঙালিদের কাছে ইতিবাচক বার্তা যেতে পারে।’
বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এই মুহূর্তে দিল্লিতে রয়েছেন। তিনি কলকাতায় ফিরলে এ ব্যাপারে বৈঠক হবে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে শমীক রাজনৈতিক দলের ব্যানারে দুর্গাপুজো আয়োজনের পক্ষপাতী নন।
২০২০–তে মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা যখন বিজেপির উদ্যোগে দুর্গাপুজো করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তখন দলের অন্দরে এ বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছিলেন শমীক। যদিও সিলমোহর পড়েছিল মুকুলদের মতেই।
এখন শমীক নিজেই পার্টির রাজ্য সভাপতি। যথারীতি এ বারের ভোটেও বাঙালি আবেগ তৃণমূলের হাতিয়ার। পার্টির উদ্যোগে দুর্গাপুজো করার প্রশ্নে শমীকের অবস্থানের বদল হয় কি না, এখন সেটাই দেখার। তাঁর কথায়, ‘আমাদের কার্নিভাল করে প্রমাণ করতে হবে না যে, আমরা দুর্গাভক্ত। আমরা বোঝাতে চাইছি, দুর্গাপুজো আর পশ্চিমবঙ্গ সমার্থক।’