এই সময়: অকশনের বিরোধিতায় হয়েছে জনস্বার্থ মামলা। তার শুনানির আগেই অকশনের নোটিস জারি করা হয়ে গেল।
আলিপুর চিড়িয়াখানার পশুপাখির সংখ্যায় বড় রকমের গরমিল রয়েছে বলে দাবি করে এবং চিড়িয়াখানার উল্টো দিকে অ্যাকোয়ারিয়াম–সংলগ্ন জমির অকশনের বিরোধিতা করে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিল পরিবেশরক্ষা ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘সেভ ওয়াইল্ড অ্যানিম্যাল্স অফ আলিপুর জ়ু অ্যান্ড আওয়ার নেচার’ (স্বজন)।
সেই মামলার শুনানি শুরুর আগে বুধবার ওই জমির ই–অকশনের নোটিস জারি করা হয়েছে। ৩৪–এ আলিপুর রোডের ওই জায়গায় ১৬৬.৫ কাঠা জমি অকশন করার কথা ঘোষণা করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজ়িং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (হিডকো)।
কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলা প্রসঙ্গে ‘স্বজন’–এর সদস্যরা ‘এই সময়’–কে বলেন, ‘এখন যেখানে আলিপুর চিড়িয়াখানা এবং অ্যাকোয়ারিয়াম ও চিড়িয়াখানার পশু হাসপাতালটি রয়েছে, সে সব জায়গার মালিকানা আসলে বাংলার নবাব মিরজ়াফরের। এর মধ্যে আলিপুর রোডের পূর্ব দিকের বেগম বাড়ি নামে পরিচিত জমিটি সম্ভবত মিরজ়াফরের স্ত্রী মুন্নি বেগমের মহল ছিল।’
পরবর্তীকালে ওই জমি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে আসে। কিন্তু জমি হস্তান্তরের কোনও দলিল পাওয়া যায়নি। ‘স্বজন’ জানিয়েছে, জমিটি কলকাতা পুরসভার মালিকানায় কোনও দিনই ছিল না। অথচ টেন্ডারে এবং অন্য অনেক সিদ্ধান্তের সময়ে জমিটিকে কলকাতা পুরসভার জমি হিসেবেই দেখানো হয়েছে।
‘স্বজন’–এর তরফে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা মহালয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘একটা সময়ে শীতকালে চিড়িয়াখানায় বহু পরিযায়ী পাখি আসত। কিন্তু তার পরে চিড়িয়াখানার উল্টো দিকে একটি পাঁচতারা হোটেল তৈরি হলো। সেই ইস্তক কমে গেল ওই পাখিদের আসা। আমাদের আশঙ্কা, ওই চত্বরে বড় ধরনের কোনও নির্মাণ পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।’
চিড়িয়াখানার পশু হাসপাতাল ও সংলগ্ন অ্যাকোয়ারিয়ামের জমিকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য অকশনের বিরোধিতা করে ‘স্বজন’–এর অন্য দুই সদস্য স্বর্ণালী চট্টোপাধ্যায় ও জয়ন্ত সেনের বক্তব্য, ‘চিড়িয়াখানার জমি বন সুরক্ষা আইন অনুযায়ী বদল করা যায় না। তা ছাড়া, টাউন প্ল্যানিং আইন এবং বেঙ্গল পার্ক আইন অনুযায়ী চিড়িয়াখানা একটি পার্ক এবং সেখানে এমন ভাবে বাড়ি করা যায় না।’
৩৪–এ আলিপুর রোডের ওই ১৬৬.৫ কাঠা জমিতে হিডকো যে ই–অকশনের ঘোষণা করেছে, সেখানে ‘স্টার্টিং প্রাইস’ রাখা হয়েছে ৪১০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। দর হাঁকার ‘বিড ইনক্রিমেন্টাল ভ্যালু’ রাখা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা করে। অকশনের দিন ধার্য করা হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর। হাইকোর্টে হওয়া জনস্বার্থ মামলাটি এখন বিচারাধীন।