প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকেই পাঠ্যপুস্তক ‘পাচার’-এর অভিযোগ। এই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান সদর উত্তর সার্কেলের প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক সৌমেন মণ্ডলের বিরুদ্ধে। সরকারি অফিস থেকে বই পাচারের অভিযোগ ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পড়েছে জেলাজুড়ে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা শিক্ষাদপ্তরের তরফে। যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক।
সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের কাছে একটি অভিযোগপত্র জমা দেন বর্ধমানের একাধিক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা। সেখানে দাবি করা হয়, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ হওয়া বই সদর উত্তর সার্কেলের স্কুল পরিদর্শকের অফিসে জমা ছিল। গত ১২ এপ্রিল এবং ৩০ এপ্রিল দু’টি ট্রাকে করে পাঠ্যবইগুলি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেগুলি বিক্রি করে দেওয়া হয় বলেও এই অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়।
বর্ধমান সদর উত্তর সার্কেলের শিক্ষক মিন্টু রক্ষিতের অভিযোগ, ‘অনেক সময় বাচ্চারা বই হারিয়ে ফেলে। তাদের জন্য যখন সেই বই চাইতে যাচ্ছি, পাচ্ছি না। ট্রাকে করে বই এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই দায়িত্ব স্কুল পরিদর্শকের হাতে থাকে। আমাদের সন্দেহ তিনি বইগুলি বিক্রি করেছেন। আমরা চাই সত্য উদঘাটন হোক।’
নতুনগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল নইম বলেন, ‘গত ৩০ এপ্রিল আমরা এসআই অফিস থেকে খবর পাই যে বাচ্চাদের পাঠ্যপুস্তক ট্রাকে করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই বইগুলি সরকার বিনামূল্যে দেয়। কেন তা ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তা আমরা জিজ্ঞাসা করি। একজন বললেন, তা পাণ্ডুয়ার একটি মিলে বিক্রি হবে। অফিসের এক কর্মী অবশ্য বলেন, তা কুলিগ্রাম হাইস্কুলে রাখা হবে। কারণ এখানে জায়গার অভাব রয়েছে। কিন্তু আমরা কুলিগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের থেকে জানতে পারি সেখানে বই রাখা হয়নি। এর পরেই আমরা অভিযোগ দায়ের করি।’
এ দিকে যাঁর বিরুদ্ধে এ সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, বর্ধমান উত্তর সদর সার্কেলের স্কুল পরিদর্শক সেই সৌমেন মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, ‘এই অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিসে বিভিন্ন খবরের কাগজ জমা হয়েছিল। তা পরিষ্কার করা হয়। যাঁরা এই অভিযোগ করেছেন, তাঁরা অতীতেও বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছিলেন।’ এই শিক্ষকরাই ২০২০ সালে তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এখানেই শেষ নয়, তাঁর আরও দাবি অভিযোগকারী শিক্ষকরা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রয়েছেন। কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই ছুটি নেন তাঁরা, অভিযোগ করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি সরব হওয়ায় প্রতিশোধের মনোভাব নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে দাবি সৌমেন মণ্ডলের।
ঘটনাটি প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘এসআই-এর বিরুদ্ধে আমরা কিছু অভিযোগ পেয়েছি শিক্ষকদের থেকে। এর প্রেক্ষিতে তদন্তকমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামিকাল অর্থাৎ শনিবার তার রিপোর্ট পাব। যদি কোনও অস্বচ্ছতার বিষয় সামনে আসে সেক্ষেত্রে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’