নিজস্ব প্রতিনিধি, সংবাদদাতা: গরমের দাপট অব্যাহত! বৃহস্পতিবার রাতে ঝড় ও বৃষ্টিতে ক্ষণিকের জন্য মেলে স্বস্তি। যদিও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। শুক্রবার দিনভর গরমে হাঁসফাঁস করেন উত্তরবঙ্গবাসী। দুপুরে রাস্তা, হাটবাজার ছিল কার্যত শুনশান। স্বস্তির খোঁজে তরাই ও ডুয়ার্সের নদীতে, ওয়াটার পার্কে যান অনেকে। একই সঙ্গে গরমের জেরে সমস্যায় পড়েছে শিশুরা। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এদিকে, গরমের হাত থেকে সরকারি বেসরকারি স্কুল, কলেজ পড়ুয়াদের রেহাই দিতে সকালে পঠনপাঠনের দাবি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে এসএফআই।
শুক্রবার রাতে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঝড় ও বৃষ্টির জেরে শিলিগুড়ি শহরের গেটবাজারে রাস্তার উপর পড়ে গাছ। খড়িবাড়ির ধুতিভিটায় দু’টি গাছ পড়ে একটি মন্দির ও বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি ব্লকে ঝড়ের তীব্রতা ছিল বেশি। দেওয়ানগঞ্জ, পার মেখলিগঞ্জ, হেমকুমারি গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। বানিয়াপাড়ায় গাছ পড়ে দু’টি গৃহপালিত পশুর মৃত্যু হয়েছে। একটি ঘর ও স্কুটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলপাইগুড়িতেও কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়। এর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়েছে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি।
শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে হালকা বৃষ্টি হয়। এতে টানা কিছুদিন ধরে চলা গরমের হাত থেকে সাময়িক স্বস্তি পান উত্তরবঙ্গবাসী। কিন্তু বেলা বাড়তেই সূর্যের তাপে নাস্তানাবুদ হন আমজনতা। দুপুরের দিকে শিলিগুড়ি ও কোচবিহার সহ অধিকাংশ শহরের রাস্তা, হাটবাজার কার্যত ফাঁকা ছিল। জরুরি প্রয়োজনে যাঁরা রাস্তায় বের হন তাঁরা ব্যবহার করেন ছাতা।
তবে চড়া রোদে সবচেয়ে বেশি কাহিল শিশুরা। গত ক’দিনে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের বেশকিছু ছাত্রছাত্রী স্কুলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরাও কমেছে। একইসঙ্গে বৃষ্টির অভাবে জলপাইগুড়িতে ধান চাষের জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। জলের অভাবে জমি থেকে কাটা পাট জাঁক দেওয়ার সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মাঠেই শুকোচ্ছে পাট। তিস্তার সেচ খালে জল না থাকায় গজলডোবায় মার খাচ্ছে চাষাবাদ। গরমের দাপটে শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির চা বাগানে বাড়ছে রোগ-পোকার আক্রমণ। উধাও হয়ে যাচ্ছে চায়ের সবুজ পাতা।
সমতলের মতো দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়েও চড়ছে পারদ। এখন দুই পাহাড়ি শহরে টি-শার্ট পরে ঘুরছেন পর্যটকরা। অনেক হোটেলে ফ্যানও চালাতে হচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, এদিন দার্জিলিংয়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কালিম্পংয়ে ২৮, শিলিগুড়ি ও কোচবিহারে ৩৭.৪ ডিগ্রি করে ও জলপাইগুড়িতে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। আবহাওয়াবিদরা জানান, এবার এখানে মৌসুমিবায়ু অনেকটাই দুর্বল। তাই গতবছরের মতো বৃষ্টির দাপট নেই। স্থানীয়ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য গরমের দাপট কমছে না। এদিকে, এদিন সন্ধ্যার পর উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই হালকা হাওয়া চলায় বাসিন্দারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন।