• রাজগঞ্জে অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষাকেন্দ্রে নাম থাকলেও শিশু পড়ে বেসরকারি স্কুলে!
    বর্তমান | ২৬ জুলাই ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাতায় পড়ুয়া হিসাবে নাম রয়েছে। অথচ সেই শিশু পড়ে বেসরকারি স্কুলে! এদিকে, ক্লাসরুম ফাঁকা থাকলেও রোজ রান্না হয় হাঁড়ি-গামলা ভর্তি করে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না হওয়া সেই খাবার টিফিন কৌটো ভর্তি করে চলে যায় বাড়ি বাড়ি। দিনের পর দিন এভাবেই চলছে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জের মান্তাদাড়ি পঞ্চায়েতের মহারাজঘাট আইসিডিএস। এনিয়ে অবশ্য কোনও গোপনীয়তা নেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ভাগ্যশ্রী রায়ের। প্রশ্ন করতেই বললেন, আমার সেন্টারে খাতায়-কলমে ২৪ জন পড়ুয়া। চারজন অন্তঃসত্ত্বা ও একজন প্রসূতি। পড়ুয়াদের বেশিরভাগের আমাদের আইসিডিএসে এনরোলমেন্ট থাকলেও তারা বেসরকারি স্কুলে নার্সারিতে পড়ে। সময়মতো তাদের অভিভাবকরা টিফিন কৌটো দিয়ে যান। তাতে খাবার দিয়ে দিই আমরা। 

    এভাবে চলতে পারে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র? ওই কর্মীর জবাব, কী করব! আমরা তো অভিভাবকদের বলি। কিন্তু তাঁদের ছেলেমেয়ের ভালো-মন্দ তো তাঁরাই বুঝবেন। আমরা খুব বেশি হলে দুই-চারবার বলতে পারি। 

    মহারাজঘাট আইসিডিএসেই দেখা মিলল মান্তাদাড়ি পঞ্চায়েতের অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজার মিশা সরকারের। বিষয়টি অজানা নেই তাঁরও। বললেন, আমার এলাকার অন্য সেন্টারগুলিতে শিশুরা তবুও আসে। কিন্তু এখানে উপস্থিতির হার সবচেয়ে কম। শুনেছি, এখানকার বাচ্চারা নাকি বেসরকারি স্কুলে পড়ে। মাঝেমধ্যে তাদের সেন্টারে পাঠায় বাবা-মা। যে শিশুরা বেসরকারি স্কুলে পড়ে, তাদের নাম আইসিডিএসে থাকবে কেন? সুপারভাইজারের জবাব, তাহলে তো এই সেন্টার কবেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা! বিষয়টি শুনে জলপাইগুড়ি সদরের মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী বলেন, গুরুতর অভিযোগ। খতিয়ে দেখে অবশ্যই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

    শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মহারাজঘাট আইসিডিএসে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাসরুমে মাত্র একটি শিশু বসে রয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সুপারভাইজার পাশে চেয়ারে বসে গল্প করছেন। সহায়িকা রান্নার জোগাড়ে ব্যস্ত। সেন্টারে একজন শিশু থাকলেও রান্নাঘরে ঢুঁ মারতেই দেখা যায়, যা আয়োজন, তাতে অন্তত ত্রিশজনের রান্না তো হবেই। জানতে চাওয়া হলে সহায়িকা বলেন, অপেক্ষা করুন। কেন এতজনের রান্না, জানতে পারবেন। সহায়িকার কথামতো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই বাকিটা স্পষ্ট হয়ে যায়। কেউ বাইকে করে, কেউ বা সাইকেলে, হেঁটে এসে একের পর এক টিফিন কৌটো জমা রেখে চলে যেতে থাকেন। 

    তাঁদেরই একজনকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার বাচ্চার এখানে নাম আছে। কিন্তু ভালো পড়াশোনার জন্য বাচ্চাকে নার্সারি স্কুলে পাঠাই। সেন্টারের দিদিরা বলেছেন, আইসিডিএসে নাম থাকলে খাবার মিলবে। সেভাবেই চলছে। শুধু মান্তাদাড়ি পঞ্চায়েতের মহারাজঘাট আইসিডিএস নয়, জেলার একাধিক অঙ্গনওয়াড়িতে ভুয়ো পড়ুয়া রয়েছে বলে অভিযোগ। যাদের নাম আইসিডিএসে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে কোনওদিনই তারা সেখানে আসে না।  মূল কারণ, ওইসব শিশু বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে। শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবার পেতেই অভিভাবকরা সন্তানদের নাম অঙ্গনওয়াড়িতে রেখে দিয়েছেন। এসডিও বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি আমরা। অঙ্গনওয়াড়ি সুপারভাইজারদের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)