• জমির রেকর্ড সংশোধন হয়নি, বেকায়দায় বাসিন্দারা, জাঁকিয়ে বসেছে এনআরসি আতঙ্ক
    বর্তমান | ২৬ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: তিন দশক আগে রেলের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করে গড়া হয় কলোনি। যার নাম পাতিকলোনি। এজন্য রেলকে ৩৩ লক্ষ টাকা প্রদানও করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও সেই জমির রেকর্ড সংশোধন হয়নি। এনিয়ে চরম বেকায়দায় বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে জাকিয়ে বসেছে এনআরসি আতঙ্ক। এখন তাঁরা শিলিগুড়ি পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ। সমস্যা মেটাতে নড়েচড়ে বসেছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ। 

    শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক অবধ সিঙ্গাল বলেন, ওই কলোনির বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়েছি। গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছে উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ। শীঘ্রই সমাধান হবে বলে আশা করছি। 

    শিলিগুড়ি শহরে রেলের জমিতে গড়ে ওঠা কলোনিগুলির মধ্যে পাতিকলোনি অন্যতম। এলআর ম্যাপ অনুসারে সংশ্লিষ্ট কলোনিতে রয়েছে দু’টি মৌজা-গোকমা ও উজানু। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৬ বছর আগে সংশ্লিষ্ট জমি রেলের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার। এখনও পর্যন্ত গোকমা মৌজার রেকর্ড সংশোধন হয়নি। সেই জমি রেলের নামেই নথিভুক্ত। যার ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম বিপাকে পড়েছেন। সেখানে প্রায় দু’হাজার লোকের বাস। যাঁদের অধিকাংশই ব্যসায়ী। এর বাইরে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কিছু বাসিন্দা চাকরি করেন। এনআরসির জিগির ওঠায় তাঁদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে। 

    স্থানীয়রা বলেন, ১৯৯৫-’৯৬ সালে কলোনিতে বসবাসকারীদের জমির পাট্টা দিয়েছিল বিগত বামফ্রন্ট সরকার। সেই পাট্টার ভিত্তিতে এখন বাড়ির প্ল্যান পাস, গৃহঋণের জন্য ব্যাঙ্কে আবেদন করেও লাভ হচ্ছে না। জমির খাজনাও জমা দিতে পারছি না। কারণ সেই জমি এখনও রেলের নামেই রয়েছে। এখন কেন্দ্র এনআরসির জিগির তোলায় ভিটেমাটি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় রাতে ঘুমাতে পারছি না। 

    ওই কলোনির বাসিন্দাদের অভিযোগ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জমির রেকর্ড সংশোধনে উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ ময়দানে ঝাঁপিয়েছে। ইতিমধ্যে তারা জমি হস্তান্তরের পুরনো নথি জোগাড় করেছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই কলোনিতে জমির পরিমাণ ৩৪.৮৯ একর। ১৯৮৯ সালের ওই জমি অধিগ্রহণ করে উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ। সেই বছর ৩ ফেব্রুয়ারি তাদের কাছে ওই জমি হস্তান্তর করে রেল কর্তৃপক্ষ। এজন্য সেই সময় প্রতি একর ৯৫ হাজার ১৭৭ টাকা দরে রেল মন্ত্রককে ওই জমির জন্য ৩৩ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৩২ টাকা প্রদান করে রাজ্য সরকার। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, অধিগ্রহণের পর সেই সময়ই জমির রেকর্ড সংশোধন হয়ে উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের নামে হওয়া উচিত ছিল। এটা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের দায়িত্ব। এবার সংশ্লিষ্ট জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য সমস্ত নথি দিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। 

    সংশ্লিষ্ট কলোনি ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে। স্থানীয় কাউন্সিলার তৃণমূল কংগ্রেসের অমরআনন্দ দাস বলেন, বিগত বামফ্রন্ট সরকারের গাফিলতিতেই এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে। মেয়র গৌতম দেবের নেতৃত্বে তা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)