নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর ও সংবাদদাতা, ডোমকল: ডোমকল শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্র। সেখানকার একটা তিনতলা সাদামাটা বাড়ি। নীচতলায় থাকেন মা-মেয়ে। বাড়িটি তাঁদেরই। দু’তলাটি ভাড়া দিয়েছিলেন। আর সেই ভাড়া বাড়িতে বসেই গোটা দেশে সাইবার প্রতারণার জাল বিস্তার করেছিল ঝাড়খণ্ডের তিন বাসিন্দা! বৃহস্পতিবার আচমকা ওই বাড়িতে হানা দেয় মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিসের সাইবার ক্রাইম থানার পুলিস। হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় সালামুদ্দিন আনসারি, কালামুদ্দিন আনসারি এবং নিয়াজ আনসারি। তিনজনেরই বাড়ি ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে।
ডোমকলের মতো ব্যস্ত শহরে দীর্ঘদিন ধরে এমন হাইটেক প্রতারণার কাণ্ড চললেও টের পাননি কেউই। সাধারণ পোশাকেই তিনজন ঘোরাফেরা করত। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মেলামেশা করত। তাদের দেখে কারও বিন্দুমাত্র সন্দেহ তৈরি হয়নি এতদিন। কিন্তু, বাড়িতে তল্লাশি চালাতেই তাজ্জব হয়ে যায় পুলিস। মোবাইল, ল্যাপটপ আর সিম কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই ভর্তি। সেগুলি নিয়েই সাইবার প্রতারণার কোটি কোটি টাকার কারবার ছিল তাদের। সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিদিন গায়েব করে দেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতরা ডোমকলে ঘাঁটি গেড়েই অনলাইনে প্রতারণার চক্র চালাত। দেশজুড়ে ছড়ানো ছিল গ্যাংয়ের সদস্যরা। অনলাইনে কেওয়াইসি আপডেট, ব্যাঙ্ক পরিষেবা, লোনের টোপ ফেলে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলা হতো। হাতিয়ে নেওয়া হত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, এটিএম কার্ড, সিম সহ গুরুত্বপূর্ণ ডেটা। তারপর সেই তথ্য ব্যবহার করে চলত কোটি কোটি টাকার বেআইনি লেনদেন। সূত্রের খবর, ১৮ জুলাই বহরমপুরের মল্লিকপাড়ার এক মহিলা সাইবার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগে তিনি জানান, মুকলেশ হোসেন নামে এক ব্যক্তি ২৫ জুন তাঁর কেওয়াইসি আপডেট করার নাম করে পাশবই, এটিএম, সিম কার্ড সব নিয়ে নেয়। কিছুদিনের মধ্যে তাঁর নামে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগে নোটিস আসে সাইবার থানার তরফে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমেই পুলিস প্রথমে গ্রেপ্তার করে মুকলেশ হোসেন নামে বহরমপুরের রাজধরপাড়ার এক বাসিন্দাকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাতেই উঠে আসে ডোমকলে আস্তানা গেড়ে থাকা দেওঘরের ওই তিন যুবকের নাম। মুকলেশই ওই তিন ঝাড়খণ্ডবাসীকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য জোগাড় করে দিত বলে খবর পায় পুলিস। এরপরই জেলা পুলিসের সাইবার ক্রাইম থানা পুলিসের টিম মুকলেশের থেকে পাওয়া সূত্র ধরেই ডোমকলে হানা দেয়। তখনই সেখান থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। পাশপাশি তাদের কাছে থেকে ১০০টি এটিএম কার্ড, ৬০ টি ব্যাঙ্কের পাসবুক সহ উদ্ধার হয় একাধিক মোবাইল, বহু সিম কার্ড ও কম্পিউটার। পুলিসের দাবি, ধৃতরা দেশজুড়ে কয়েক কোটি টাকার প্রতারণায় জড়িত। মুকলেশ মূলত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জোগাড় করত। তারপর চক্রের মূল সদস্যরা সেগুলিকে ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিত। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিসের অতিরিক্ত পুলিস সুপার (লালবাগ) রাসপ্রিত সিং বলেন, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা মুকলেশকে গ্রেপ্তার করার পর ডোমকলে থাকা ঝাড়খণ্ডের ওই তিনজনের খোঁজ পাই। এরপরে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর এটিএম কার্ড, পাসবুক, মোবাইল ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এটি সুপরিকল্পিত আন্তঃরাজ্য সাইবার প্রতারণা চক্র। আরও বড় চক্রের হদিশ পাওয়া যেতে পারে। নিজস্ব চিত্র