নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: ভ্যাপসা গরম থেকে রেহাই দিয়েছে বৃষ্টি। আর সেই বৃষ্টির দাপট বাড়তেই মাথা চাড়া দিয়েছে ডেঙ্গু। বৃষ্টির জলে জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা। চলতি বছরে নদীয়া জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে। যদিও মুর্শিদাবাদ কিংবা অন্যান্য জেলাগুলোর তুলনায় পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। তবুও ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যদপ্তর। ২৯তম সপ্তাহ অর্থাৎ গত সপ্তাহে ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ২৮তম সপ্তাহে ৮ জন এবং ২৭তম সপ্তাহে ৭ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। যদিও এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গুর কারণে মৃত্যু হয়নি নদীয়া জেলায়।
নদীয়া জেলার স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, আমরা নজরে রেখেছি। সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। উদ্বেগের কারণ নেই।
প্রতিবছর বর্ষার মরশুমে ডেঙ্গু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গোটা রাজ্যের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে নদীয়া জেলা ১২ নম্বরে রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদীয়া জেলায় এখনও পর্যন্ত ১১৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এবার দেখা যাচ্ছে শহর এলাকার পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও ডেঙ্গু বাড়ছে। চলতি বছর তেহট্ট-১ ব্লকে ১৩ জন, তেহট্ট-২ ব্লকে ১২ জন, রানাঘাট-২ ব্লকে ১০ জন, হরিণঘাটা ব্লকে ১০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে পুরসভাগুলোতে ডেঙ্গুর দাপট অনেকটাই কম এবছর। বীরনগর, হরিণঘাটা, রানাঘাট ও শান্তিপুর পুরসভায় একজন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। চাকদহ, কল্যাণী ও নবদ্বীপ পুরসভায় ২ জন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কৃষ্ণনগর পুরসভায় সর্বাধিক ৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
তবে এবার স্বাস্থ্যদপ্তরের উদ্বেগ বাড়িয়েছে হরিণঘাটা ব্লকের ফতেপুর, নগরুখড়া-১ পঞ্চায়েত, কালীগঞ্জ ব্লকের কালীগঞ্জ পঞ্চায়েত, নাকাশিপাড়া ব্লকের ধনঞ্জয়পুর পঞ্চায়েত। তেহট্ট-২ ব্লকের হাঁসপুকুরিয়া পঞ্চায়েতে ৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের হদিশ পাওয়া গিয়েছে। তবে তেহট্ট-১ ব্লকের কানাইনগর পঞ্চায়েতে সর্বাধিক ৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি করা হচ্ছে এখানে।
স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি না হলে মশাবাহিত রোগ, বিশেষ করে ডেঙ্গু, রোধ করা কার্যত অসম্ভব। এই রোগ ছড়ায় এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশার কামড়ে। মশার কামড়ের ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিতে পারে।ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ হল হঠাৎ জ্বর। অন্যান্য সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে, বমি বমি ভাব, পেটব্যথা, শরীরে ফুসকুড়ি, সারা শরীরে ব্যথা, নাক বা মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগীকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে এবং বেশি করে জল পান করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সাধারণত ডেঙ্গুর উপসর্গ ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়।