• রোজ়ভ্যালি মামলা: আর্থিক অনিয়মে CBI তদন্তের মুখে বিচারপতির কমিটিই!
    এই সময় | ২৬ জুলাই ২০২৫
  • এই সময়: বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় আমানত করে প্রতারিতদের টাকা ফেরাতে হাইকোর্টের গড়ে দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির কমিটিই আর্থিক অনিয়মে এ বার সিবিআই তদন্তের মুখে!

    রোজ় ভ্যালির বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা মেটানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতির দিলীপ শেঠের নেতৃত্বাধীন এডিসি (অ্যাসেট ডিসপোজ়াল কমিটি)–র অনিয়ম নিয়ে জমা পড়া নথি দেখে শুক্রবার বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ ও বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চ চরম হতাশা প্রকাশ করে।

    এজলাসে উপস্থিতি ইডি এবং সিবিআইয়ের কৌঁসুলিকে ডিভিশন বেঞ্চের মৌখিক নির্দেশ, ইডি এ সপ্তাহের মধ্যে রোজ় ভ্যালির যাবতীয় নথি সিবিআইকে দেবে। আগামী শুক্রবার সিবিআইকে জানাতে হবে, রোজ় ভ্যালির মূল মামলার তদন্ত কতটা এগিয়েছে।

    আর তার পরের ১৫ দিনের মধ্যে এডিসি–র আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগের তদন্ত করে প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে হবে হাইকোর্টে। পরের দিনই এ ব্যাপারে লিখিত নির্দেশ দেবে আদালত।

    যদিও ওই এডিসি–তে রয়েছেন ইডি–র সদস্যও। ফলে আর এক কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই কতটা নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান আমানতকারীদের একাংশ।

    এ দিন শুনানিতে আমানতকারীদের তরফে এডিসি–র বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ নথি–সহ পেশ করা হয়। আবার আদালতে এডিসি–র যে রিপোর্ট জমা পড়েছিল, তাতেও নানা অনিয়ম দেখে প্রশ্ন তোলে ডিভিশন বেঞ্চ।

    একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হিসেবের নথি তুলে ধরে আমানতকারীদের আইনজীবীরা দাবি করেন, নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় গত ২৬ জুন এই আদালত ওই কমিটি বন্ধের ব্যাপারে মন্তব্য করেছিল।

    তার পরেই ৩০ জুন রোজ় ভ্যালির আমানতকারীদের টাকা গচ্ছিত থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে ১ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা ট্রান্সফার হয় এডিসি–র অফিস অ্যাকাউন্টে। ওই দিনই আবার ওই অফিস অ্যাকাউন্ট থেকে ২ কোটি টাকা পাঠানো হয় চেয়ারপার্সনের অ্যাকাউন্টে। সেই নথি দেখে ক্ষুব্ধ ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইকে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়।

    বিচারপতি ভরদ্বাজের নিশানায় এডিসি–র সঙ্গেই ছিল ইডিও। আদালতের বক্তব্য, রোজ় ভ্যালির ৩১ লাখ আমানতকারীর টাকা ফেরতের আবেদন জমা পড়েছে। আপাতত ৭৪ হাজার লোককে টাকা মেটানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

    ৫৩১ কোটি টাকা হাতে আছে। তার পরেও টাকা মেটানো হয়নি! আরও বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি হাতে আছে কমিটির। সেগুলি বিক্রি করাই হয়নি। উল্টে দু’জন লোককে যুক্ত করে হোটেল ব্যবসা চালাচ্ছে খাস কমিটিই! আদালতের বক্তব্য, ইডিই এই সুযোগ দিয়েছে কমিটিকে।

    এডিসি রিপোর্টে বলেছে, ইডি ওই দু’জনকে যুক্ত করতে বলেছে। কোর্টের প্রশ্ন, ইডিকে এই এক্তিয়ার কে দিল? ইডির আইনজীবী বলেন, ‘আমরা শুধু টাকা মেটানোর বিষয়টা নিশ্চিত করতে চেয়েছি। ওই দু’জনকে যুক্ত করতে বারণ করিনি।’

    বিচারপতির ভরদ্বাজের মন্তব্য, রোজ় ভ্যালির এডিসি একটি গ্রুপকে কী করে হোটেল ব্যবসা চালাতে দিল, কী করে নির্দিষ্ট দুই ব্যক্তিকে যুক্ত করা হলো—তার তদন্ত করুক সিবিআই।

    এডিসি–তে আমানতকারীদের তরফে সদস্য থাকলেও কেন তিনি প্রশ্ন তোলেননি, সে প্রশ্নও ওঠে। যদিও আমানতকারী পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, ‘আমাদের সাব কমিটিতে রাখা হয়েছিল। মূল কমিটিতে ঢুকতে দেওয়া হতো না।’

  • Link to this news (এই সময়)