• সুন্দরবনে খোঁজ ‘সাইলেন্ট হান্টার’ নেকড়ে মাকড়সার
    এই সময় | ২৬ জুলাই ২০২৫
  • এই সময়: চারপাশে সতর্ক নজর রেখে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলছিল পতঙ্গটি। কোথাও সূক্ষ্ম সুতোর মতো কোনও জাল বিছিয়ে রাখেনি তো ছলনায় দক্ষ মাকড়সা? একবার ওই জালে জড়িয়ে পড়লে যে আর নিস্তার নেই, সেটা খুব ভালো ভাবেই জানে পতঙ্গরা।

    কিন্তু আক্রমণটা এল একেবারে অন্য দিক দিয়ে। পড়ে থাকা একটা শুকনো পাতার নীচ থেকে বিদ্যুৎগতিতে এগিয়ে এল আক্রমণকারী। দ্রুত পালিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিল শিকার, কিন্তু শিকারীর নিঃশব্দ এবং তীব্রগতির কাছে হার মানত হলো তাকে।

    শিকারি পিরাটুলা অ্যাকিউমিনাটা প্রাণীবিজ্ঞানীদের কাছে পরিচিত উলফ স্পাইডার বা নেকড়ে মাকড়সা নামে।

    জ়ুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া–র (জ়েডএসআই) প্রাণীবিজ্ঞানীরা ভারতে এই প্রথম এই প্রজাতির মাকড়সার সন্ধান পেলেন সুন্দরবনের সাগরদ্বীপে। এই আবিষ্কারের কথা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে প্রাণীবিজ্ঞান সংক্রান্ত পত্রিকা ‘জ়ুটাক্সা’–তে।

    জ়েডএসআই–এর দুই প্রাণীবিজ্ঞানী সৌভিক সেন, পি পি সুধীন এবং কোচিনের সেক্রেড হার্ট কলেজের প্রদীপ এম শঙ্করণের মিলিত অনুসন্ধানে এই প্রথম ভারত ভূখণ্ড থেকে এমন প্রজাতির মাকড়সার খোঁজ মিলল।

    বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পিরাটুলা অ্যাকিউমিনাটা প্রজাতির এই মাকড়সা লাইকোসিডি পরিবারের সদস্য। এই বর্গের নেকড়ে মাকড়সাদের মূলত এশিয়ায় পাওয়া যায়। তবে, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশেও এদের সীমিত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।

    ভারতের মাটিতে নতুন প্রজাতির এই মাকড়সার খোঁজ প্রসঙ্গে জ়েডএসআই-এর মুখ্য গবেষক সৌভিক সেন জানিয়েছেন, মাঝারি আকারের এই মাকড়সার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮-১০ মিলিমিটার। এদের দেহে ফ্যাকাসে ক্রিম রঙের উপর বাদামি এবং সাদা দাগ ও পশ্চাদ্দেশে দুটি হালকা বাদামি ডোরা রয়েছে।

    পুরুষ মাকড়সার যৌনাঙ্গে একটি ছুঁচালো মূল বাহু ও স্ত্রী মাকড়সার ডিম্বাকৃতি ‘স্পার্মাথিকা’–র উপস্থিতি একে একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘স্পার্মাথিকা’ হলো এমন একটি অঙ্গ যেখানে শারীরিক মিলনের পর শুক্রাণু সাময়িক ভাবে জমা থাকে।

    সৌভিক সেন বলেন, ‘এই মাকড়সার শারীরিক গঠন এতটাই অন্যরকম যে, প্রথম দর্শনেই বোঝা যায় এটি অচিহ্নিত একটি প্রজাতি। আমরা কয়েক সপ্তাহ ধরে এর গঠনগত বিশ্লেষণ করে তবে এই প্রজাতির নতুনত্ব নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি।’

    জ়েডএসআই–এর অধিকর্তা ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘নতুন প্রজাতির খোঁজ আমাদের খুবই আনন্দ দেয়। কিন্তু একই সঙ্গে একটা সতর্কবার্তাও দেয়। পরিবেশরক্ষায় দেরি করে ফেললে আমরা কী হারাতে পারে — সেটাই মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতি।’

  • Link to this news (এই সময়)