অসম থেকে এনআরসি নোটিস পেলেন কোচবিহারের আর এক বাসিন্দা, তিনটি নথি দেখালেও সন্তুষ্ট নয় ফরেনার্স ট্রাইবুনাল!
আনন্দবাজার | ২৬ জুলাই ২০২৫
অসম থেকে এনআরসি নোটিস পেলেন কোচবিহারের আরও এক বাসিন্দা। মাথাভাঙা-২ ব্লকের ঘোকসাডাঙা লতাপাতা গ্রাম পঞ্চায়েতের কুশিয়াড় বাড়ি এলাকায় বাড়ি ৭৫ বছর বয়সি নিশিকান্ত দাসের। মাস দুয়েক আগে অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কোর্ট থেকে এনআরসির নোটিস পান তিনি। সেই নোটিসে অহমিয়া ভাষায় লেখা হয়েছে, ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করেছেন তিনি। যদিও তিনি যে ভারতীয়, তার প্রমাণস্বরূপ তিনটি নথি ওই কোর্টে পেশ করেছিলেন নিশিকান্ত। কিন্তু তাঁর দাবি, সেগুলির কোনওটিই গ্রাহ্য হয়নি।
সম্প্রতি কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে এনআরসির নোটিস দিয়েছিল অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের সমাবেশেও হাজির ছিলেন উত্তম। সেখানে উত্তমকে দাঁড় করিয়ে বিজেপিশাসিত অসম সরকারের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। তার পরে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার গৃহবধূ অঞ্জলি শীলও ট্রাইব্যুনালের নোটিস পেয়েছেন বলে জানা যায়। এই আবহেই নিশিকান্তের ওই নোটিস পাওয়া নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়। ইতিমধ্যেই ওই বৃদ্ধের বাড়ি গিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। বিষয়টিকে বিজেপির চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
নিশিকান্ত জানিয়েছেন, বছর ছাব্বিশ আগে অসমে কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে পুলিশ। পরে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিলে ছেড়ে দেওয়া হয়। অসমে আরও ছ’মাস কাজ করে কোচবিহারে ফিরে আসেন তিনি। তার পর আর অসমে কাজ করতে যাননি বলে জানিয়েছেন নিশিকান্ত। নোটিস পাওয়ার পর জমির কাগজপত্র, ভোটার, আধার কার্ড অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কোর্টে পেশ করেন তিনি। তবে সেগুলি আদালতে গ্রাহ্য হয়নি বলে জানিয়েছেন নিশিকান্ত। তাঁকে ভোটার তালিকায় পিতার নাম দেখাতে বলা হয়। সেই নথি বার করলেও আর ওই আদালতের দ্বারস্থ হবেন না বলে স্থির করেছেন তিনি। নিশিকান্তের বক্তব্য, তিনি ভারতীয়। প্রয়োজনীয় সব নথি তাঁর কাছে আছে। কিন্তু অসমের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল কোর্টে আর সেই সবের প্রমাণ দেখাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
স্থানীয়দের বক্তব্য, তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরেই নিশিকান্তকে চেনেন এবং জানেন। এক জনের কথায়, “ছোট থেকে ওকে দেখছি। ও আমার চেয়ে বয়সে একটু বড়। দীর্ঘ দিন এখানে আছে। মাঝে কয়েক মাসের জন্য কাজ করতে অন্য রাজ্যে যেত। বয়সের কারণে বহু দিন আর যায় না।” শনিবার বেলায় নিশিকান্তের বাড়িতে যান কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। তিনি বলেন, “বাঙালিদের মনে আতঙ্ক তৈরি করতেই বিজেপি এই সমস্ত কাজ করাচ্ছে।”