• পড়ুয়াদের আশ্বস্ত করেছি, মেন হস্টেলে ফিরে যাক, নিরাপত্তার দিকটা আমরা দেখব: যাদবপুরে র‌্যাগিং আতঙ্ক নিয়ে ডিন
    আনন্দবাজার | ২৬ জুলাই ২০২৫
  • তিন বছর কেটে গিয়েছে। এখনও র‌্যাগিং নিয়ে আতঙ্ক কাটেনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে। বছর তিনেক আগের এক অগস্টে সেখানে মৃত্যু হয়েছিল বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার। অভিযোগ, মেন হস্টেলের তিনতলার বারান্দা থেকে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন র‌্যাগিংয়ের কারণে। তার পর ওই হস্টেল থেকে প্রথম বর্ষের সকল ছাত্রকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের ভিতরে তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সেখান থেকে আর মেন হস্টেলে ফিরতে নারাজ মৃত ছাত্রের সহপাঠীরা। র‌্যাগিং নিয়ে এখনও তাঁরা আতঙ্কিত। তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জানিয়েছেন, তাঁরা নির্ভয়ে হস্টেলে ফিরতে পারেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্ট্‌স রজত রায় শনিবার আনন্দবাজার ডট কমকে এ কথা জানিয়েছেন।

    ২০২৩ সালের ৯ অগস্ট যাদবপুরের মেন হস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন বাংলা বিভাগের ওই পড়ুয়া। ১০ তারিখ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। সে দিনের মৃত ছাত্রের সহপাঠীরা এখন তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া। ঘটনার পর তাঁদের বিশেষ বন্দোবস্ত করে মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে আর তাঁদের জায়গা হওয়ার কথা নয়। কারণ, সেখানে শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়ারাই থাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ওই ছাত্রের সহপাঠীদের তাই আবার মেন হস্টেলে পাঠানো হচ্ছে। যাতে আপত্তি তুলে তাঁরা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, মেন হস্টেলের র‌্যাগিং নিয়ে এখনও তাঁরা আতঙ্কিত। তাঁরা কেউ সেখানে থাকতে চান না। এই সমস্ত আবাসিকের সঙ্গে কথা বলেছেন রজত। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নিয়ম অনুযায়ী, তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের তো মেন হস্টেলে যেতেই হবে। না হলে আমরা প্রথম বর্ষের নতুন পড়ুয়াদের জায়গা দিতে পারব না। যাঁরা চিঠি দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। ওঁদের ফিরে যেতে বলেছি। হস্টেলের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সব সময় সতর্ক আছি এবং থাকব।’’

    প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর পর পৃথক ভাবে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ওই ঘটনার তদন্ত করেছিল। পুলিশ গ্রেফতার করে ছ’জন বর্তমান এবং ছ’জন প্রাক্তন ছাত্রকে। প্রত্যেকেই এখন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে আছেন। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পৃথক তদন্তে ওই ঘটনায় ৩০ জনেরও বেশি সিনিয়র ছাত্রের যোগ পেয়েছিলেন। তাঁদের হস্টেলে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। একটি সিমেস্টারের জন্য তাঁদের সাসপেন্ডও করা হয়েছিল। এই ছাত্রদের মধ্যে কয়েক জন আবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

    বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাগি-মুক্ত করতে কর্তৃপক্ষকেই আরও কঠোর হতে হবে, মনে করেন মৃত ছাত্রের বাবা। তাঁর কথায়, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, হস্টেলকে র‌্যাগি-মুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ দরকার। আমার ছেলের অপমৃত্যু হয়েছে ওখানে। আর কোনও বাবার কোল যেন এ ভাবে খালি না হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষকে এর দায়িত্ব নিতে হবে।’’

    হস্টেলের আবাসিকেরা একটি জিবি বৈঠকে এই সংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের দাবি, মূল ক্যাম্পাসেই তাঁদের থাকতে দেওয়া হোক। কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া চিঠিতে তাঁরা চলতি বছরেও একটি র‌্যাগিংয়ের ঘটনা উল্লেখ করেছেন মেন হস্টেলে। জিবি বৈঠক অনুযায়ী, যদি একান্তই তাঁদের মেন হস্টেলে ফিরতে হয়, সেখানে বেশ কিছু নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। সিনিয়রদের সঙ্গে কোনও ব্লক বা ফ্লোরে থাকতে তাঁরা রাজি নন। শৌচাগার, খাওয়ার জায়গাও সিনিয়রদের সঙ্গে তাঁরা ভাগ করতে চান না। এই দাবিগুলি নিয়ে ডিন অফ স্টুডেন্ট্‌সের সঙ্গে পড়ুয়াদের আলোচনা হয়েছে। তিনি নিরাপত্তা জোরদার করার আশ্বাস দিয়েছেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)