• বিহার মডেলে ইন্টেনসিভ রিভিশন, প্রশিক্ষণ শুরু বঙ্গে, বাড়ি তালাবন্ধ! চারবারেও খোঁজ না পেলে নাম বাতিল?
    বর্তমান | ২৭ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বিহার মডেলেই বাংলায় হবে ভোটার তালিকার ‘স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর)! সেই পর্বের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল শনিবার। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর অবশ্য বিষয়টি এখনও খোলসা করেনি। কিন্তু এদিন নজরুল মঞ্চে প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্তর্গত ছ’টি জেলার (কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও নদীয়া) বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) প্রশিক্ষণ শেষে একটি বিষয় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। সেটা হল— আগামী আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাংলায় শুরু হবে ভোটার তালিকা যাচাই ও সংশোধনের কাজ। বাড়ি বাড়ি পৌঁছে এই কাজটি সারবেন বিএলও’রা। কিন্তু কারও বাড়ি তালাবন্ধ থাকলে কী হবে? সেব্যাপারে একটি গাইডলাইন বেঁধে দেওয়া হয়েছে এদিনের প্রশিক্ষণে। সংশ্লিষ্ট বাড়িতে চারবার যাবে বিএলও। তাতেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খোঁজ না মিললে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে সেই নাম যাবে ‘বাদের খাতায়’। এতেই উস্কে গিয়েছে বিতর্ক। বিহার মডেলে রাজ্যে এসআইআর চালু করার প্রস্তুতি ঘিরে তুমুল রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের বক্তব্য, এসআইআর করে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না। প্রকৃত ভোটারদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলে, কমিশনকে যে রেওয়াত করা হবে না, সে হুঁশিয়ারি একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে আগাম দিয়ে রেখেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গেরুয়া শিবির অবশ্য বিহার মডেলকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের দাবি, একমাত্র এসআইআর’ই পারে এ রাজ্যে  ভোটার তালিকা থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের বাদ দিতে। 

    কিন্তু ঠিক কী বলা হয়েছে এদিনের প্রশিক্ষণ পর্বে দেওয়া গাইডলাইনে? সূত্রের খবর, সেখানে স্পষ্ট লেখা— যাচাই প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রথমবার কোনও বাড়ি তালাবন্ধ দেখলে, দরজায় স্লিপ সেঁটে ফিরে যাবেন বিএলও। এরপর ভোটারের খোঁজে ওই ঠিকানায় অন্তত তিনবার যেতে হবে তাঁকে। তাতেও খোঁজ না মিললে, কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হবে যে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট ভোটারকে। ফলে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ যেতে পারে। যদিও চূড়ান্ত তালিকায় নিজের নাম বজায় রাখার জন্য একমাস সময় পাবেন ওই ব্যক্তি। কমিশন নির্ধারিত যে ১১টি নথিকে কেন্দ্র করে গোড়া থেকেই বিতর্ক, সেগুলির মধ্যে যে কোনও একটি তাঁকে দাখিল করতেই হবে। একমাসের মধ্যে তা করতে না পারলে, সংশ্লিষ্ট ভোটারের নাম পুরোপুরি বাতিল করা হবে। ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিবারের নাম থাকলে কিছুটা সুরাহা মিলতে পারে। এসআইআরের নথিগুলির মধ্যে আধার, ভোটার এবং রেশন কার্ড না থাকায় ইতিমধ্যেই কমিশনকে বিঁধেছে সুপ্রিম কোর্ট। কাল, সোমবার এই বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত দিকনির্দেশ করতে পারে। 

    নজরুল মঞ্চের প্রশিক্ষণ শিবিরে হাজির ছিলেন ওই ছ’টি জেলার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সাতজন বিএলও, একজন সুপারভাইজার এবং একজন এইআরও। এই পর্বে বিহারের এসআইআরের নির্যাস সংক্রান্ত একটি পুস্তিকাও বিলি করা হয়। এসআইআর কবে থেকে রাজ্যে শুরু হবে, সেটা অবশ্য খোলসা করেননি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল। তাঁর বক্তব্য, ‘এসআইআর আমাদের হাতে নেই। জাতীয় নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিলেই সেই মতো কাজ শুরু হবে।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)