নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: টাকার বিনিময়ে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করে দেওয়ার অভিযোগে বেঙ্গল এসটিএফ শনিবার গ্রেপ্তার করল ডাকবিভাগের এক কর্মীকে। উত্তর দিনাজপুরের কানকি পোস্ট অফিসের কর্মী বিধান মুর্মু দীর্ঘ দু’বছর ধরে এই কাজ করছিলেন বলে অভিযোগ। জাল নথি ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর লোকজনকে ওটিপি পাঠানোর ঘটনায় ধৃতদের জেরা করে ডাকবিভাগের ওই কর্মীর নাম জানতে পারেন তদন্তকারীরা। তারপরই তাঁকে উত্তর দিনাজপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বীরভূম থেকে জাল নথি কাণ্ডে ধৃত দুই অভিযুক্ত জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশিদের আধার, ভোটার কার্ড, জন্ম সার্টিফিকেট সহ বিভিন্ন নথি তৈরি করে দিত। সাইবার কাফে থেকে জন্ম সার্টিফিকেট বা ভোটার কার্ড বানানো হলেও আধার কার্ড তৈরি করা হতো পোস্ট অফিস থেকে। এসব ব্যবহার করে এদেশে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও পাসপোর্ট তৈরি করেছে অনুপ্রবেশকারীরা। তদন্তে উঠে জানা গিয়েছে, এইসব আধার কার্ড তৈরি করা হতো উত্তর দিনাজপুরের কানকি পোস্ট অফিস থেকে। কয়েক হাত ঘুরে দালালদের মাধ্যমে এদেশে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের জন্ম সার্টিফিকেট সহ বিভিন্ন নথি যেত ডাক বিভাগের ওই কর্মীর কাছে। তবে কোনও বাংলাদেশিকে আধার কার্ড তৈরির জন্য সশরীরে হাজির হতে হতো না। বিধান মুর্মু জেরায় তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, আধার কার্ড তৈরির ফরম্যাটে নাম, বয়স, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর সহ সমস্ত কিছুই তিনি ফিল-আপ করতেন। দালালরা বাংলাদেশিদের যে পাসপোর্ট ছবি পাঠাত, সেগুলি স্ক্যান করে ওই ফরম্যাটে বসিয়ে দিতেন তিনি। বিভিন্ন নামে আবেদন করা হলেও ফোন নম্বর, ই-মেল আইডি ছিল একজনের। এখান থেকে জানা যায়, সমস্ত আধার কার্ডে একই মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকী, ফর্মে আবেদনকারীর সইও একজন করেছে। বায়োমেট্রিক তথ্য দিত দালালরা। অর্থাৎ অন্যের বায়োমেট্রিক তথ্য থাকত ওই আধারে। দালালের ই-মেলে আধার কার্ড হয়ে গিয়েছে বলে মেসেজ এলে, ওই পোস্ট অফিস থেকে গোছা করে নিয়ে আসত সেগুলি। এই কাজে সাহায্য করতেন বিধান মুর্মু।
তিনি অফিসারদের জানিয়েছেন, আবেদনে যে ঠিকানা দেওয়া হতো, সেগুলি ভুয়ো। একেকটি আধার কার্ডের তৈরির জন্য তিনি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। বিশেষ বিশেষ কেসে ২৫ হাজার পর্যন্ত পেয়েছেন তিনি। তদন্তকারীরা জেনেছেন, যে সমস্ত আধার কেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে দালালদের যোগ আছে, সেখানে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে যেত দালাল চক্র। সঙ্গে থাকত তৈরি হয়ে আসা নতুন আধার। সংশোধনের জন্য আধারের সাইটে গিয়ে অবৈধভাবে ভারতে আসা বাংলাদেশির বায়োমেট্রিক ছাপ নিত সেন্টারের কর্মীদের একাংশ। এভাবে এই চক্র গত দু’বছরে দু’হাজারেরও বেশি আধার কার্ড তৈরি করে দিয়েছে। ওই আধার নম্বর ধরে বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে চক্রের বাকিদের খোঁজও চলছে।