• বোসের লেখা নাটকে উদ্দাম নৃত্য, বলিউডি হিন্দি গানে রাজভবনে ঐতিহ‌্য নষ্টের অভিযোগ
    প্রতিদিন | ২৭ জুলাই ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: পিস রুম, সমান্তরাল প্রশাসন, নিজের আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের পর এবার রম‌্য নাটক! রাজ‌্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের লেখা সেই নাটকের মঞ্চায়ন উপলক্ষে‌ শনিবার সন্ধ‌্যায় চটুল আইটেম ডান্স-বলিউডি হিন্দি গানে মাতোয়ারা রাজভবনের অভ‌্যন্তর। যা নিয়ে নতুন করে নিন্দার ঝড় কলকাতার বৌদ্ধিক মহলে। গোটা বিষয়টিকে রাজভবনের গরিমা ও মর্যাদার প্রতি অবমাননাকর বলে দাগিয়ে দিয়েছে সুশীল নাগরিক সমাজ।

    শনিবার সন্ধ‌্যায় রাজভবনের ঐতিহ‌্যময় সেমিনার কক্ষে অভিনীত হয়েছে রাজ‌্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের লেখা ‘চৌরঙ্গি’স ফ্লাওয়ার’ নাটকটি। নাটকের প্রযোজক হিসাবে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ ইজেডসিসি-র পূর্বাঞ্চলীয় শাখার নাম থাকলেও অভিনয়ে ছিলেন রাজ‌্য বিজেপির অন‌্যতম নেত্রী শর্বরী মুখোপাধ‌্যায়ের মতো বিশেষ একটি রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুগামীদের। দর্শকাসনেও সংখ‌্যাধিক‌্য ছিল গেরুয়াপন্থী মানুষজনের। ভারসাম‌্য রক্ষায় অভিনয় জগতের দুই জনপ্রিয় মুখ মুনমুন সেন ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে হাজির করা হয়েছিল বটে‌! দর্শকাসনের প্রথম সারিতে রাজ‌্যপাল ও তাঁর স্ত্রীর পাশের বসে থাকা দুই অভিনেত্রীকে নিয়ে উচ্ছ্বাসও কম ছিল না উপস্থিত জনের। কিন্তু তারপরও বিতর্ক এড়ানোর চেষ্টায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি রাজভবন কর্তৃপক্ষ।

    রাজভবনে নাটক বা কোনও শিল্পচর্চায় আপত্তির কিছু নেই অবশ‌্য! তবে এ নিয়ে নাট‌্যপ্রেমীদের বক্তব‌্য, রাজভবনে চর্চা হওয়া উচিত বিশুদ্ধ নান্দনিক শিল্প বা লোকশিল্পের, যা এই মহান ভবনের ঐতিহ‌্য, গরিমা বা মর্যাদার সঙ্গে মিল খায়। রাজ‌্যপালের লেখা এদিনের নাটকের বেশ কয়েকটি দৃশ‌্য নিয়ে সে কারণেই আপত্তি বিশিষ্টজনদের। হিন্দি চটুল গান, উত্তেজক আইটেম ডান্স, মদ‌্যপানের মতো রসদে ভরপুর ওই দৃশ‌্যগুলি রাজভবনের আভিজ‌াতে‌্যর পক্ষে হানিকারক বলেই মন্তব‌্য তাঁদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজভবনের এক আধিকারিকের এই প্রসঙ্গে সহাস‌্য কটাক্ষ, “মনে রাখতে হবে, ইংরেজ আমলে এই বাড়ির নাম ছিল ‘লাটভবন’। লাট সাহেবের বাড়িতে নাচ-গান হতেই পারে!”

    রাজ‌্যপালের বিশেষ আমন্ত্রণে প্রায় ৩০ বছর পর রাজভবনে পা রেখে নাটক দেখলেও নাটক নিয়ে অবশ‌্য কোনও মন্তব‌্য করেননি মুনমুন সেন। মন্তব‌্য করেননি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও। সংবাদ মাধ‌্যমকে মুনমুন বলেন, “আমি যখন স্কুলে পড়তাম সেই সময় রাজভবনে রাজ্যপালের এডিসিকে চিনতাম। প্রায় তিরিশ বছর পর আবার এলাম। এখানে নাটক দেখতে এলাম।” রাজ‌্যপাল হিসাবে বাংলায় পা রাখার কয়েক মাস পর থেকেই একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন সি ভি আনন্দ বোস। রাজ‌্য সরকারের সঙ্গে বিরোধ, প্রশাসনকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক মন্তব‌্য করা, বিধানসভার পাস করা বিল ও নবান্ন থেকে পাঠানো ফাইল দিনের পর দিন ফেলে রাখার পাশাপাশি জড়িয়েছেন মহিলাঘটিত বিতর্কেও। সেই কেলেঙ্কারির অভিঘাত এতটাই তীব্র ছিল যে রাজভবনে কোনও মহিলাকে না যাওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়। সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতার পর সেই ‘উদ‌্যমে’ খামতি পড়ায় রাজ‌্যপাল আপাতত এখন সাহিত‌্য রচনায় মন দিয়েছেন বলে খবর। আর সেই পথেই লিখেছেন কলকাতার সমাজ জীবনের উপর এদিনের মঞ্চস্থ হওয়া নাটক ‘চৌরঙ্গি’স ফ্লাওয়ার’।
  • Link to this news (প্রতিদিন)