মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পরে ভারত ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মশলা-চা পান করছেন— সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সঙ্গে মশলা-চা পান কি কোনও বার্তাবহ, নাকি নিছকই সমাপতন? বঙ্গের চা বলয় অবশ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পরে আশায় বুক বেঁধেছে। রাজ্যের চা উৎপাদকদের আশা, এ বার আরও বেশ কিছু পরিমাণ বেশি চা পাড়ি দেবে বিলেতে। ছোট ছোট চা বাগানের পাতা দিয়ে হাতে তৈরি চা পাতাও লন্ডনে পৌঁছতে পারবে। কারণ ব্রিটেনে চা পাঠাতে আর শুল্ক প্রয়োজন হবে না।
রাজ্য থেকে ব্রিটেনে চা পাতার রফতানি নতুন নয়। স্বাধীনতার আগে থেকেই দার্জিলিঙের চা লন্ডনে যায়। একাধিক ফুটবল বিশ্বকাপে দার্জিলিং চা ‘অফিশিয়াল’ পানীয়ের স্বীকৃতিও পেয়েছিল। ডুয়ার্সের কিছু ‘কুলীন’ চা বাগানের তৈরি চা ব্রিটেনে সরাসরি রফতানি হয়। ডুয়ার্স-তরাইয়ের ‘কালো চা’ ব্রিটেনে রফতানি হয়। তবে তা সীমিত পরিমাণে। সেই চা রফতানি হলেও উৎপাদকদের কোনও বাড়তি লাভ হয় না বলে দাবি। কারণ, উৎপাদকেরা বিপণনকারী সংস্থাকে চা বিক্রি করে। সেই সংস্থা কোথায় রফতানি করে, কত মুনাফা অর্জন করে তার কিছুই উৎপাদকদের নাগালে আসে না। ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্যের ফলে এ বার থেকে সরাসরি উৎপাদকেরা ব্রিটেনের বিপণন সংস্থাকে চা পাঠাতে পারবে অতিরিক্ত শুল্ক ছাড়াই।
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দেশের বাজারে চায়ের বাড়তি জোগানের সমস্যা কিছুটা লাঘব করতে পারে বলে মনে করছেন চা শিল্পের সঙ্গে যুক্তেরা। দেশের অন্যতম চা প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্মকর্তা, বর্তমানে দার্জিলিঙের চা বাগানগুলির দায়িত্বে থাকা জীবনচন্দ্র পাণ্ডে বলেন, “দার্জিলিং চা বেশ কিছু দিন ধরেই লড়াই করছে। ইউরোপের দেশগুলিতে কম রফতানি হচ্ছে। এই বাণিজ্য চুক্তিতে রফতানি বাড়বে। তার ফলে দেশের চায়ের বাজারে অবশ্যই সুখবর আসবে।”
ডুয়ার্সের বেশ কিছু চা বাগানের পাতা থেকে হাতে তৈরি চা উৎপাদন হয়। মূলত ক্ষুদ্র চা চাষিরা এই উৎপাদন করেন। হাতে তৈরি চায়ের দাম বেশি। বিপণন সংস্থাগুলি এই চা কিনে রফতানি করে। রফতানির বেশিরভাগটাই হয় ব্রিটেনে। শুল্ক মুক্ত হওয়ায় এ বার সরাসরি উৎপাদকেরাই চা পাঠাতে পারবেন রানির দেশে। ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন সিস্টা-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আমাদের কাছে বিশাল বড় সুযোগ। আশা করছি, সেই সুযোগের লাভ আমারা তুলতে পারব।”