দুঃস্বপ্নের আর এক নাম যেন ভিআইপি রোড। বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। কিন্তু দুর্ভোগ কমেনি। জলমগ্ন সার্ভিস রোডে গাড়ি বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাড়ি ঠেলে মালিক কিংবাচালকের পরিত্রাণের জন্য মোটা টাকা হাঁকছেন স্থানীয় যুবকেরা। জলঠেলে বাড়িতে পৌঁছতে রাজি নয় অ্যাম্বুল্যান্স! এ বারেও বৃষ্টির পরে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিগত কয়েক বছর ধরে ভারী বর্ষায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া যেন তাঁদের গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে।
ভিআইপি রোডের এই ছবি হলদিরাম-কৈখালি এলাকার। প্রতি বর্ষাতেই ভারী বৃষ্টিতে বাসিন্দারা এমন জল-যন্ত্রণার সম্মুখীন হন। কিন্তু প্রতি বারই কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার ব্যাখ্যা মেলে না। বরং এ নিয়ে বিধাননগর পুরসভা ও পূর্ত দফতরের মধ্যে চলে দায় ঠেলাঠেলি।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, নিম্নচাপ শক্তি হারানোয় শুক্রবার সারা রাত বৃষ্টি তেমন হয়নি। শনিবার সকালে রোদও উঠেছিল। তবে বৃষ্টিও হয়েছে। কিন্তু ভিআইপি রোডের হলদিরাম এলাকার জল নামেনি। সেখানে দু’টি সার্ভিস রোডে দীর্ঘ সময় প্রায় এক হাঁটু জল জমে ছিল। শুধুমাত্র ভিআইপি রোডটুকুই জেগে। সার্ভিস রোড জলমগ্ন থাকায় গাড়ির চাপ বাড়ে ভিআইপি রোডে। যার জেরে তেঘরিয়া থেকে বিমানবন্দর অবধি যানজট তৈরি হয়। প্রতি বছর এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষ সময় হাতে নিয়ে বেরিয়েও উড়ান ধরতে পারেন না।
বোঝার উপরে শাকের আঁটির মতো হলদিরাম সংলগ্ন সার্ভিস রোডে বছরের পর বছর ধরে মেট্রো রেলের স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। তার জেরে সার্ভিস রোডে বিভিন্ন জায়গায় গর্ত তৈরি হয়েছে। মেট্রোর কাজের নির্মাণ সামগ্রী যত্রতত্র পড়ে রয়েছে। জলমগ্ন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলে সেই সব গর্তে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, মেট্রোর তরফে ওই জায়গায় বড় নিকাশি নালা তৈরি করলেও কেন জল নামে না? হলদিরাম সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি আবাসন, বাজার কমপ্লেক্স, ছোটদের স্কুল, একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল। আবাসনের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তাঁরা কার্যত জলবন্দি। দু’দিনের বৃষ্টিতে রাস্তায় বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘রাস্তায় জল জমে আছে বলে কোনও অ্যাপ-ক্যাব আবাসনে ঢুকতে চায় না। অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে ১৫০ টাকা রিকশা ভাড়া দিতে হল শুধুমাত্র রাস্তা পারাপার করতে!’’ অন্য এক বাসিন্দা বিশ্বদীপ মিত্র বলেন, ‘‘গত দু’দিন ধরেহাঁটুজল ঠেলে অফিস যাচ্ছি। জলের নীচের গর্ত বুঝতে না পেরে রাস্তায় পড়ে গিয়েছি। এই দুর্ভোগ আরও কত দিন চলবে?’’
বিমানবন্দর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জল ওই তল্লাট দিয়ে বাগজোলা খালে পড়ে। গত বছর রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, মেট্রো কর্তৃপক্ষ, পূর্ত দফতর, বিধাননগর পুরসভা, হিডকো এনকেডিএ-সহ একাধিক সংস্থা হলদিরাম এলাকার জল-যন্ত্রণার সমাধানে বৈঠক করেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি যে একই তিমিরে, তা আবারও দেখিয়ে দিল নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি।
বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তীর যুক্তি, ‘‘ভিআইপি রোডের আশপাশের এলাকার জল নিকাশি ব্যবস্থা আমরা নিয়ন্ত্রণ করি। কিন্তু ভিআইপি রোড পূর্ত দফতরের অধীনে। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।’’
পূর্তমন্ত্রী পুলক রায়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি জল নামাতে।’’ কিন্তু কেন প্রতি বছর ওই এলাকা প্লাবিত হয়, তা নিয়ে কিছুই জানাতে চাননি পূর্তমন্ত্রী।