• দক্ষিণ কলকাতা ফের এগিয়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যায়, পুর পরিসংখ্যানে ইঙ্গিত
    আনন্দবাজার | ২৭ জুলাই ২০২৫
  • টানা দিনকয়েকের বৃষ্টিতে চার দিকে জমে রয়েছে জল। তারই মধ্যে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গির আতঙ্ক। কলকাতা পুরসভার পরিসংখ্যান বলছে, এ বারেও চিন্তায় রাখছে দক্ষিণ কলকাতা। ২০২৩ সালে সেখানে হু হু করে বেড়েছিল আক্রান্তের সংখ্যা। সেই তুলনায় ২০২৪ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল কিছুটা কম। কিন্তু চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত পুর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফের দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

    পুর চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘প্রবল বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন অংশে জল জমেছে। এ ক্ষেত্রে জমা জলে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা জন্মানোর আশঙ্কা প্রবল। ফলে কোনও ভাবেই বাড়ির আশপাশে জল জমতে দেওয়া চলবে না।’’

    কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত পুর এলাকায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৭১ জন। ২০২৪ সালের ওই একই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮৪। চলতি বছরে ওই পরিসংখ্যান একই (১৮৪) থাকলেও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডের পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে। কারণ, এ বার সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি।

    ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সাত নম্বর বরো, অর্থাৎ, পার্ক স্ট্রিট, মল্লিকবাজার, ট্যাংরা, পার্ক সার্কাস এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯। ওই সব জায়গায় ২০২৪ সালের ওই সময়কালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ২৩। ওই বরোর শুধু ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডেই এ বছর ছ’জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

    আট নম্বর বরোর গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, ভবানীপুর এলাকায় ২০২৪-এর জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন পাঁচ জন। এ বছর সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮। আট নম্বর বরোর ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের ভবানীপুরে এ বছর ২০ জুলাই পর্যন্ত ছ’জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর ওই সময়ে ওই ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য। ২০২৩ সালে আক্রান্ত হন তিন জন। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি অসীম বসু বলেন, ‘‘সম্প্রতি দু’জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। গোটা ওয়ার্ডে নজর রাখছি।’’

    ন’নম্বর বরোয় ভবানীপুরের একাংশ, একবালপুর, মোমিনপুর, হেস্টিংস, কলকাতা বন্দর এলাকা এ বছর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ন’নম্বর বরো এলাকায় ২০২৩ সালের ২০ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২। ২০২৪ সালে তা ছিল ১৪। এ বছর ওই সময়কালে তা বেড়ে হয়েছে ১৭। মোমিনপুরের ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডেই এ বছর সাত জন আক্রান্ত হন। যেখানে গত বছর ওই সময়ে মাত্র এক জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০২৩ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন। ১০ নম্বর বরোর ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডে এ বছর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত সাত জন। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১০ ও ৬।

    ১৩ নম্বর বরো, অর্থাৎ, হরিদেবপুর এলাকায় ২০২৩ সালে অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যুও হয়েছিল। ওই বরোয় গত বছর একই সময়ে ডেঙ্গিতে চার জন আক্রান্ত হন। এ বছর সেখানে ১৫ জন আক্রান্ত। ওই বরোর অধীনে ১১৭, ১২০, ১২২ নম্বর ওয়ার্ডে উল্লেখ্যযোগ্য হারে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

    ১৫ নম্বর বরোতেও গত বছরের (৮) তুলনায় এ বার (১০) ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তবে পরিসংখ্যান নিয়ে চিন্তিত নন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁর দাবি, ‘‘ডেঙ্গি নেই বললেই চলে। ডেঙ্গি দমনে পুরসভা বছরভর কাজ করছে। তবে, সামনের তিন মাস সবার কাছেই চ্যালেঞ্জ। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। জল জমতে দেওয়া চলবে না।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)