বিধানসভা ভোটের আগে বাংলার ১৬২টি আসনকে পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে বিজেপি। দলীয় সূত্রের খবর, জয়ের সম্ভাবনার নিরিখে এই আসনগুলি বাছাই করে ভোটের অনেক আগে থেকে নিবিড় প্রচারের পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।
বিজেপি সূত্রের খবর, বিধানসভা কেন্দ্রগুলিকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম স্তরে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পরে দল কখনও হারেনি, এমন ৫৫টি আসন রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে গত লোকসভা ভোটের নিরিখে বিজেপির এগিয়ে থাকা ৯২টি বিধানসভা আসন। যদিও প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের মধ্যে অধিকাংশ আসনই অভিন্ন। আর তৃতীয় স্তরে রাখা হয়েছে এমন ৭০টি আসন, যেগুলিতে গত লোকসভা নির্বাচনের হিসাবে অল্প ব্যবধানে পিছিয়ে আছে দল। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, ৯২টি ও ৭০টি মিলিয়ে মোট ১৬২টি আসনকে এখন থেকেই বিশেষ নজরে রাখা হলে সুফল মিলতে পারে।
তৃতীয় স্তরে ৭০টির মধ্যে ৪৯টি আসনে বিজেপি পিছিয়ে আছে ১০ হাজারেরও কম ভোটে। এর মধ্যে আছে নাগরাকাটা, নাকাশিপাড়া, নবদ্বীপ, জগদ্দল, ব্যারাকপুর, দমদম উত্তর, রাজারহাট-গোপালপুর, বারাসত, সোনারপুর দক্ষিণ, রাসবিহারী, ভবানীপুর, কাশীপুর-বেলগাছিয়া, মানিকতলা, আসানসোল উত্তর প্রভৃতি। আর বাকি ২১টি আসনে বিজেপি পিছিয়ে আছে ১০-১৫ হাজার ভোটে। এই তালিকায় রয়েছে চৌরঙ্গি, করিমপুর, বসিরহাট দক্ষিণ, হিঙ্গলগঞ্জ, হাওড়া উত্তর, শিবপুর, কালনা, কাটোয়া, সিউড়ি প্রভৃতি আসন। সূত্রের খবর, কৌশল বৈঠকে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এখন থেকে নিবিড় প্রচার শুরু হলে এই ৭০টি আসনেই জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
এই ‘নিবিড় প্রচারে’র অংশ হিসেবেই দলের জাতীয় কর্মসমিতি ও রাজ্য কোর কমিটির সদস্য, অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর জনপ্রিয়তা ও ‘গ্রহণযোগ্যতা’কে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। তাঁকে সামনে রেখে এক দিকে যেমন স্থানীয় ‘গোষ্ঠী রাজনীতি’ দূরে রাখা যাবে, তেমনই নিচু তলার কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর কাজও এগিয়ে রাখা যাবে বলে মনে করছেন নেতৃত্ব। জোড়াসাঁকো দিয়ে গত বৃহস্পতিবার কর্মিসভার কাজ শুরু করেছেন মিঠুন। গিয়েছেন ভবানীপুর ও রাসবিহারীতেও। আরামবাগ, তারকেশ্বর, নোয়াপাড়া, ব্যারাকপুরেও সভা করার কথা রয়েছে তাঁর। এই ভাবেই প্রথম পর্যায়ে ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রে কর্মিসভা করে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মিঠুনের প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়ার কথা। পরবর্তী কৌশল ঠিক করতে সেই রিপোর্ট কাজে লাগাবে দিল্লি।
বিজেপি সূত্রের খবর, কর্মী-সমর্থকদের উদ্বুদ্ধ করতে পর্দার ‘মহাগুরু’র মেজাজে মিঠুন পাল্টা মারের নিদান এবং তার পরে আইনি লড়াইয়ে দল পাশে থাকবে বলে বার্তা দিচ্ছেন। এর সঙ্গেই তাঁর বার্তা, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোট বিজেপির জন্য ‘শেষ সুযোগ’। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। বিজেপি সূত্রের খবর, মিঠুন কর্মিসভায় জানিয়েছেন, তিনি ভোটে লড়বেন না। দলের প্রচার সামলানো ও ঐক্যের বার্তা দেওয়াই তাঁর কাজ। এই নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছে। তবে ভিন্ রাজ্যে বাঙালি নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে মিঠুনের সাম্প্রতিক বক্তব্য ঘিরে তাঁকে পাল্টা নিশানা করছে তৃণমূল কংগ্রেসও।