অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: কয়েকটি সংগঠনের ডাকে নবান্ন অভিযানের জমায়েতের উপর কলকাতা হাই কোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ী সংগঠনের মামলার ভিত্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হাই কোর্ট। শুধু তাই নয়, হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে এই নবান্ন অভিযানের কোনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কয়েকটি সংগঠনের তরফে সোমবার নবান্ন অভিযান হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্য মঞ্চ, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ, যৌথ মঞ্চ, সরকারি কর্মচারী পরিসর পশ্চিমবঙ্গের মতো একাধিক সংগঠন ও মঞ্চ হাওড়া স্টেশনে জমায়েত করবে। তারপর সেখান থেকে গ্র্যান্ড ফরশোর রোড ধরে নবান্নে যাবে। তবে পুলিশ তাদের যেখানে আটকাবে সেখানে তাঁরা বসে অবস্থান শুরু করবেন বলে রবিবার জানান সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের রাজ্য আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ।
রবিবার ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘আমরা কলকাতার শহিদ মিনারে যেরকমভাবে অবস্থান শুরু করছি সেরকমভাবে নবান্নে যেতে গিয়ে হাওড়ার ফরশোর রোডেও পুলিশ আটকালে আমরা ওখানে বসেই লাগাতার অবস্থান শুরু করবো।’’ এদিকে শনিবারই হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সোমবার নবান্ন অভিযান করার কোনও অনুমতিই হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে দেওয়া হয়নি। তার উপর মঙ্গলাহাটের ব্যবসায়ীরা নবান্ন অভিযানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করায় হাই কোর্টও এই নবান্ন অভিযানের জমায়েতের উপর শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে এর পরও নবান্ন অভিযান হলে পুলিশের অনুমতি না নেওয়ায় ও হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা না মানায় বেআইনি জমায়েত করার জন্য যাবতীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে পুলিশ বলে ওদিন জানিয়েছিলেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠি।
এদিকে, কয়েকটি সংগঠনের ডাকা নবান্ন অভিযানকে বেআইনি ঘোষণা করে একে আটকাতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রবিবার থেকেই তৎপর হন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। আন্দোলনকারীদের জন্য হাওড়া শহরের তিনটি মূল জায়গায় বসানো হয় লোহার ভারি ব্যারিকেড। হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নবান্নে ঢোকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নবান্নের দিকে যাওয়ার শহরের মূল তিনটি প্রবেশপথকে সোমবার সকাল থেকেই বড় বড় লোহার ব্যারিকেড দিয়ে সিল করে দেওয়া হবে। হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন রেল মিউজিয়াম, ফরশোর রোডের রামকৃষ্ণপুর ঘাট গেট ও জি টি রোডের বঙ্গবাসী মোড়ের কাছে বসানো হয়েছে লোহা ও কংক্রিটের ব্যারিকেড। একই সঙ্গে শিবপুর কাজিপাড়ার মোড় ও নবান্নর কাছেও ব্যারিকেড করার জন্য বড় বড় লোহার গার্ডরেল প্রস্তুত রাখা হয়।
সংগঠনের সদস্যরা কোনওভাবে কাজিপাড়া ও মন্দিরতলায় জমায়েত করলে এই দু’টি জায়গাতেও পুলিশ লোহার ব্যারিকেড দিয়ে নবান্ন অভিযানকারী সংগঠনের সদস্যদের যাতে আটকাতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও বেআইনি জমায়েত রুখতে প্রায় ২ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তিনটি জলকামানও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। মিছিল ও জমায়েতের উপর নজরদারি রাখতে হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে প্রায় ১০টি ড্রোন ওড়ানো হবে। শনিবারই হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন সোমবার নবান্ন অভিযানের অনুমতি পুলিশ দেয়নি তার উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর পরও যদি কেউ নবান্ন অভিযানের জন্য জমায়েত করে তাহলে তাকে বেআইনি ঘোষণা করে কড়া পদক্ষেপ আইনি পদক্ষেপ করবে হাওড়া সিটি পুলিশ। সেইমতোই রবিবার থেকে প্রস্তুত হয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ।