‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর প্রথমবার বাড়ি ফিরে সংবর্ধনায় ভাসলেন সেনা জওয়ান দীপ, উচ্ছ্বাস শান্তিপুরের গ্রামে, বাড়িতে শুভেচ্ছা স্থানীয় বিধায়কের
বর্তমান | ২৮ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ড্রোন ওড়াতে দক্ষ। পোস্টিং ছিল ভুটান সীমান্তে। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পাল্টা পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে ‘অপারেশন সিন্দুর’ গ্রহণ করে কেন্দ্র। তখন ডাক পড়ে বাছাই করা কয়েজন সেনা-জওয়ানের। সেই দলে ছিলেন শান্তিপুরের বাবলা আরবলদা গ্রামের বাসিন্দা দীপ বিশ্বাস। রবিবার কয়েকদিনের ছুটিতে বাড়ি ফিরলেন তিনি। ‘রিয়েল হিরো’কে নিয়ে মাতলেন গ্রামের মানুষ। তাঁকে সংবর্ধনা জানাতে হাজির ছিলেন শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী।
আরবলদা গ্রামেই জন্ম দীপের। বাবা পেশায় কৃষক। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন ভারতীয় সেনায় যোগ দেবেন। স্বপ্নপূরণ ২০২৪ সালে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেই সেনাবাহিনীর পরীক্ষায় বসেন। এক চান্সে উত্তীর্ণ। যোগ দেন দেশ সেবার কাজে। আর্টিলারি সেকশনে ফার্স্ট পোস্টিং। ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে দীপ অত্যন্ত পারদর্শী। কাজের শুরু অসমে। পরে ভুটান সীমান্তে। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু হলে ডাক পড়ে দীপেরও। জম্মু-কাশ্মীর পৌঁছে জানতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ মিশনের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে তাঁকে। ঝাঁপিয়ে পড়েন অপারেশনে। ভারত-পাক সংঘর্ষের দিনগুলিতে সামলেছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তারপর এই প্রথম ছুটি পেলেন দীপ। এদিন সকালে পৌঁছন গ্রামের বাড়িতে।
দীপ আসছেন—খবর ছিল আগে থেকেই। সকাল হতে না হতেই গ্রামজুড়ে উৎসবের মেজাজ। বাড়ির সামনে থিকথিকে ভিড়। সেখানে পুষ্পবৃষ্টির আয়োজন। সঙ্গে ফুলের মালা। বরণ করে নেওয়া হয় ঘরের বীর সন্তানকে। ছেলেকে জড়িয়ে আবেগের বাঁধভাঙা কান্না গর্ভধারিণী মায়ের। পড়শিদেরও চোখে জল। তার মধ্যেই দীপের বাড়িতে আসেন শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী। সংবর্ধনা জানান দীপকে।
‘অপারেশন সিন্দুর’-এর অভিজ্ঞতা ভাগ করতে গিয়ে দীপ বলছিলেন, ‘ভুটান সীমান্তে ছিলাম। হঠাৎ জানতে পারি আমাদের নিচে নামতে হবে। সমতলে আসার পর আমাদের সোজা নিয়ে যাওয়া হয় জম্মু-কাশ্মীরে। শুরু হয় মিশনের পরিকল্পনা। বিভিন্ন দায়িত্ব সামলাতে হয়েছে। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যাব। এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ মিশনের সদস্য হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। দেশের জন্য আরও নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।’
দীপকে এদিন সংবর্ধনা দিতে পেরে আপ্লুত বিধায়ক ব্রজকিশোর। তাঁর কথায়, ‘আমি একজন সাধারণ মানুষ। দীপকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিলাম। আমাদের জন্য তিনি এবং তাঁর মতো যাঁরা অপারেশন সিন্দুরে বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ কৃতিত্ব শুধু তাঁদেরই। ক’দিনের ছুটি শেষে দীপকে আবারও চলে যেতে হবে দেশের কাজে। আমরা থাকব তাঁর পরিবারের সঙ্গে। যাতে দীপ নিশ্চিন্তে আমাদের জন্য সীমান্তে রাত জাগতে পারেন।’ -নিজস্ব চিত্র