নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: পুলিসি তৎপরতার জন্য অনেকটাই বাগে আনা গিয়েছে করিমপুরের কাশির সিরাপ পাচার চক্রকে। ধরা পড়েছে ওই এলাকার কুখ্যাত মাদক কারবারি আকবর মণ্ডল। আর তাতে স্বস্তিতে সীমান্ত এলাকার পাট চাষিরা। বিশেষ করে করিমপুরের হোগলবেড়িয়া থানা এলাকায় এই ছবি দেখা গিয়েছে। এবছর এখনও পর্যন্ত কাশির সিরাপ পাচারকারীদের জন্য পাটচাষিরা সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। বিগত বছরগুলোতে দেখা গিয়েছে, হোগলবেড়িয়া এলাকায় পাটখেতের মধ্যে দিয়ে কাশির সিরাপ পাচার করার সময় দুষ্কৃতীরা ফসলের দফারফা করে দিতে। সেই নিয়ে থানাতেও অভিযোগ জানাতেন চাষিরা। কিন্তু, সুরাহা কিছু হতো না। এবছর পাট চাষিরা কোনও অভিযোগ জমা না পড়ায় কাশির সিরাপ পাচার চক্র অনেকটা কোণঠাসা বলে মনে করছে পুলিস মহল। বিগত এক বছরে হোগলবেড়িয়া থানা এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার হয়েছে। সেইসঙ্গে পাচারকারীদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, জেলার মাদক ব্যবসা নির্মূল করতে গোটা জেলার পাশাপাশি করিমপুর এলাকার লাগাতার অভিযান চলছে। মাদকের পাশাপাশি কারবারিরাও ধরা পড়েছে। এর ফলে অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে সাফল্য এসেছে। মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া-জেলার মাঝামাঝি জায়গায় মাদক ব্যবসার আঁতুড়ঘর করিমপুর অবস্থিত। পাশাপাশি তা বাংলাদেশ লাগোয়া হওয়ায় ভৌগোলিকভাবেও বিশেষ সুবিধা পায় পাচারকারীরা। বিভিন্ন রাজ্য থেকে এনে করিমপুরে কাশির সিরাপ মজুত করা হয়ো এরপর সেখান থেকে অন্যত্র পাচার করা হয়।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অন্যতম সীমান্ত থানা হল এই হোগলবেড়িয়া। যার প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ছ’কিলোমিটার এলাকায় কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। মধুগড়ি, বাউশমারি, কাচারিপাড়ার মতো ভারতের কাঁটাতারহীন এলাকা দুই দেশের পাচারকারীদের সুবিধাই হয়। হোগলবেড়িয়া এলাকায় ব্যাপকহারে পাটচাষ হয়। সেই পাটখেতের উপর দিয়েই রাতের অন্ধকারে পাচারকারীরা কাশির সিরাপ সীমান্তে নিয়ে যায়। মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্যে সামাজিক ক্ষতির পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। গত বছরও হোগলবেড়িয়া থানায় পাটখেত নষ্টের ১০-১৫টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। তবে এবছর এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হোগলবেড়িয়া থানায় গত এক বছরে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও কাশির সিরাপ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ৪ ও ২৫ তারিখ যথাক্রমে ১৪০০ কেজি গাঁজা এবং ২৫০ বোতল কাশির সিরাপ বাজেয়াপ্ত হয়। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ৩৯০০ বোতল কাশির সিরাপ উদ্ধার হয়েছে। ওই মাসেরই ২৭ তারিখ প্রায় ৪৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়। তারপর গত ২৩ মার্চ ৪৯৫ বোতল কাশির সিরাপ এবং গত ১১ মে ৮০০ বোতল কাশির সিরাপ উদ্ধার করে হোগলবেড়িয়া থানার পুলিস।
কয়েকদিন আমে মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল থেকে ধরা হয় করিমপুর এলাকার কুখ্যাত মাদক কারবারি আকবর মণ্ডলকে। জানা গিয়েছে, ২০০৬ সাল থেকে আকবর সীমান্ত এলাকায় মাদক ব্যবসা চালাচ্ছিল। মূল পান্ডা ধরা পড়ায় করিমপুরে মাদক সিন্ডিকেটে বড়সড় আঘাত হানার গিয়েছে বলেই মনে করছে পুলিস মহল। -নিজস্ব চিত্র