• মায়ের সামনেই একরত্তি শিশুকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে বাবা
    বর্তমান | ২৮ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ ছিলই। সম্প্রতি মাত্র ১৫ মাসের শিশুকন্যার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হওয়ার কথাও জানতে পারে বাবা। তারপর থেকেই একরত্তিকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছিল। বাঁকুড়া সদর থানার বগা গ্রামে গত বুধবার গভীর রাতে মায়ের সামনেই বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে শিশুকন্যাকে বাবা খুন করে। এই খুনের কথা প্রশান্ত বাউরি নামে ওই যুবক পুলিসের কাছে স্বীকার করেছে। যদিও শিশুকন্যার দেহ পুলিস উদ্ধার করতে পারেনি। ঘটনার তিনদিন পর প্রশান্ত’র বলা জায়গা থেকে কিছু হাড়গোড় পুলিস পেয়েছে। মৃত শিশুকন্যাকে গ্রাম সংলগ্ন ঝোপজঙ্গলে ফেলে দেওয়ার পর তার দেহ শিয়ালে খুবলে খেয়েছে বলে তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন। 

    গ্রেপ্তারের পর রবিবার শিশুকন্যার বাবা প্রশান্ত ও মা মণি বাউরিকে বাঁকুড়া জেলা আদালতে তোলা হয়। ওইসময় মায়ের চোখে জল দেখা গেলেও বাবা ছিল ভাবলেশহীন। সংবাদমাধ্যমের সামনে স্ত্রী’কে মুখ খুলতে দেখে প্রশান্ত কিছুটা উত্তেজিতও হয়ে পড়ে। সে স্ত্রীকে ইশারায় চুপ করতে বলে। এদিন বিচারক শিশুটির বাবা প্রশান্তকে সাত দিনের পুলিস হেফাজত, আর মাকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

    বাঁকুড়ার পুলিস সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, গত বুধবার রাতে প্রশান্ত বালিশ চাপা দিয়ে ওই শিশুকন্যাকে খুন করে। ওইসময় পাশেই তার স্ত্রী দাঁড়িয়েছিল। সে প্রমাণ লোপাটে স্বামীকে সাহায্য করেছে। পুলিসের কাছে মেয়ের নিখোঁজের ব্যাপারে মিথ্যা বয়ানও দেয়। প্রশান্তর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। শিশুটির মায়ের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাট সহ অন্যান্য অভিযোগের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই শিশুকন্যার বাবা ও মা দু’জনেরই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চরমে উঠেছিল। ছোট মেয়ের জন্মের পর তার পিতৃত্ব নিয়ে প্রশান্ত প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। মেয়ে বিশেষভাবে সক্ষম জানার পর সে শিশুটিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। উল্লেখ্য, বাঁকুড়া সদর থানার বগা গ্রামে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিশুকন্যা ‘নিখোঁজ’ কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা পরপর দু’দিন গ্রামে গিয়ে তদন্ত করেন। তল্লাশি অভিযানে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও নামানো হয়। তা সত্ত্বেও শিশুর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে প্রশান্ত পুলিসের কাছে খুনের কথা কবুল করে। তার স্বীকারোক্তি মতো, গ্রাম সংলগ্ন ঝোপ থেকে কিছু হাড়গোড় পাওয়া যায়। সেগুলি কোনও শিশুর বলেই পুলিস অনুমান করছে। সেগুলি নিখোঁজ শিশুর কি না, তা জানার জন্য ফরেন্সিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সদর থানার এক আধিকারিক বলেন, ধৃত দম্পতি বারবার বয়ান বদল করায় প্রথম থেকেই আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। থানায় এনে জেরা করার সময় তারা ভেঙে পড়ে। তবে তার আগে নানাভাবে আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিল। দুধের শিশুকে খুন করে প্রমাণ লোপাটের পর বাবা-মায়ের এই ধরনের মনোভাব সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না।   ধৃত মা ও বাবাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)