পরিচয়পত্র দেখিয়েও কাজ হয়নি! বাংলার পরিচারিকাকে হেনস্তার অভিযোগ হরিয়ানায়
প্রতিদিন | ২৮ জুলাই ২০২৫
ধীমান রায়, কাটোয়া: হরিয়ানার গুড়গাঁওয়ের রাস্তায় যাতায়াতের সময় পরিচিত একজনের সঙ্গে বাংলায় কথা বলেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের বুলা মণ্ডল। তারপরেই হরিয়ানার পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কাগজপত্র চাওয়া হয়। সঙ্গে নিয়ে যাওয়া আধার, ভোটার ও প্যানকার্ড দেখিয়েছিলেন বুলাদেবী। কিন্তু মানতে চায়নি পুলিশ। কাটোয়া থেকে পুলিশের সংশাপত্র চাওয়া হয়েছে পরিচারিকা বুলাদেবীর কাছে। শুক্রবার সেকথা ফোনে বৃদ্ধা মাকে জানানোর পর বুলাদেবীর মা চিন্তায় পড়েছেন। তিনি কাটোয়া থানার দ্বারস্থ হয়েছেন।
কাটোয়া শহরের চাঁপাপুকুর পাড় এলাকার বাসিন্দা বুলা মণ্ডল। আট বছর আগে স্বামী মারা যান। দুই ছেলে কলকাতায় কাজ করেন। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা বিধবা মা। দু’বছর আগে পরিচারিকার কাজ করতে হরিয়ানায় যান বুলাদেবী। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসেন। মায়ের জন্য খরচ পাঠিয়ে দেন। ভাড়াবাড়িতে থাকেন। বুলাদেবী জানিয়েছেন, দিন পাঁচেক আগে বাংলায় কথা বলার জন্য পুলিশ তাঁকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তারপর কাগজপত্র কাছাকাছি থানায় দেখিয়ে আসতে বলা হয়। সেই নির্দেশমতো বুলাদেবী আধার, ভোটার কার্ড দেখিয়ে আসেন। বুলাদেবী বলেন, ‘‘কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দু-তিনদিনের মধ্যে যেন কাটোয়া থানার তরফে দেওয়া স্থায়ী বাসিন্দার সংশাপত্র দেখানো হয়। মাকে বলেছি ব্যবস্থা করে পাঠানোর জন্য। এখন খুব ভয়ে ভয়ে রয়েছি। পুলিশকে আড়াল করে কাজে যাচ্ছি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখন মুখ লুকিয়ে বাসায় ফিরছি।’’
তবে কেবল বুলাদেবীই নন, গুরগাঁওতেও বাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগ। তাতে আতঙ্কিত কাটোয়ার ঘোড়ানাশ গ্রাম থেকে যাওয়া প্রায় ১৫ জন বাঙালি পরিয়ায়ী শ্রমিক৷ স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র চাওয়া হয়েছে তাঁদের কাছেও। খবর পেয়ে নথি চেয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হচ্ছেন ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা। কাটোয়া-২ ব্লকের জগদানন্দপুর অঞ্চলের ঘোড়ানাশ গ্রাম। এই গ্রাম থেকে বেশকিছু পুরুষ মহিলা হরিয়ানায় কাজে গিয়েছেন। কেউ সেখানে বাইক চালান। কয়েকজন মহিলা সেখানে পরিচারিকার কাজ করেন৷ তাঁদের মধ্যে গোবিন্দ হাজরা ফোনে বলেন, ‘‘এখানেও বাঙালিদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। আমরা খুব আতঙ্কে রয়েছি৷ আমাদের চোখের সামনে কয়েকজন বাঙালিকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে। মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সঙ্গে আমার স্ত্রী ও ছোট মেয়ে রয়েছে। খুব আতঙ্কে রয়েছি।’’
ঘোড়ানাশ গ্রামের বাসিন্দা তারক হাজরা জানিয়েছেন, তাঁর দাদা লাল্টু হাজরা, পিসি ভাগীরথ হাজরা, দুই বোন সেখানে রয়েছেন। হরিয়ানা পুলিশ আধার, ভোটার কার্ড মানছে না৷ বলছে জমির দলিল লাগবে৷ এখন আতান্তরে পড়েছেন ওই শ্রমিকরা। কাটোয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ গৌতম ঘোষাল বলেন, ‘‘ঘোড়ানাশ গ্রামের ১৫-২০ জন পরিযায়ী এখন হরিয়ানার শ্রমিক গুরগাঁওতে রয়েছেন৷ সেখানে তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন। পঞ্চায়েতের কাছে সংশাপত্র চেয়েছেন। আমরা এখানে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি।’’