বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: পুজোর মরশুমে সান্দাকফু ট্রেকিং রুটে দুর্ঘটনা এড়াতে এগিয়ে এল ভারত-নেপাল যৌথ কমিটি ‘নমস্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা ইকো-ট্যুরিজম’। ট্রেকারদের মেডিক্যাল সাপোর্ট এবং গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটি। ‘ওয়েস্ট ফ্রি রুট’ গড়ে তুলতে এখন থেকে ট্রেকাররা সান্দাকফুতে ফেলে আসতে পারবেন না বর্জ্য। মোতায়েন করা হবে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাহাড়ে রওনার আগে এবং ফেরার পথে বহন করা সামগ্রী মিলিয়ে দেখাতে হবে।
নমস্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা ইকো-ট্যুরিজমের চেয়ারপার্সন কেশরী গুরুং জানান, দেশ-বিদেশের পর্বতারোহীদের আকর্ষণ বাড়াতে সান্দাকফুতে ১০-১১ জুন আয়োজিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ‘ক্রস বর্ডার ইকো-ট্যুরিজম’ উৎসবে ভালো সাড়া মিলেছে। অনেক সংস্থা এগিয়ে এসেছে। এবার আগামী পুজো মরশুমে ট্রেকারদের নিরাপত্তা, মেডিক্যাল সাপোর্ট বাড়ানোর পাশাপাশি সম্পূর্ণ ট্রেক রুটকে ‘ওয়েস্ট ফ্রি রুট’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেজন্য বিশেষ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দার্জিলিংয়ের সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের ধারে পশ্চিমবঙ্গ-নেপাল সীমান্তের সান্দাকফু সিঙ্গালিলা পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ। এখান থেকে পৃথিবীর পাঁচটি সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে এবং মাকালু দেখা যায়। রডোডেনড্রন ঘেরা এই পর্বতশৃঙ্গ অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের কাছে অমর্ত্যভূমি।
কিন্তু ওই এলাকায় যেমন একদিকে প্লাস্টিক দূষণ বাড়ছে, অন্যদিকে দুর্ঘটনাও ঘটছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন পর্বতারোহীর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় মৃত্যু হয়েছে। ওই বিপদ এড়াতে নড়েচড়ে বসেছে ভারত ও নেপাল দুই দেশের ট্যুর অপারেটর সংস্থা, হোটেল ও হোমস্টে মালিক সংস্থা, জিটিএ, রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির প্রতিনিদের নিয়ে গঠিত সংস্থা। সম্প্রতি দার্জিলিংয়ের তুমলিংয়ে এক বৈঠকে ‘নমস্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা ইকো-ট্যুরিজম’ সম্পূর্ণ ট্রেক রুটকে ‘ওয়েস্ট ফ্রি রুট’ হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলে বর্জ্যহীন এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন চালু করাই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য। পাশাপাশি দুর্গম এলাকায় মেডিক্যাল সাপোর্ট বাড়ানোর কথা ভাবা হয়েছে। এজন্য এলাকায় রাখা হবে অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাস্ক, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।
রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান রাজ বসু জানান, সান্দাকফুর দিকে যে বিখ্যাত ট্রেকিং রুট রয়েছে, এবার সেদিকে নজর দিচ্ছে ভারত ও নেপাল। প্রায় দু’শো বছর ধরে ওই সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অ্যাডভেঞ্চার ট্রেকিং ও মাউন্টেনিয়ারিং চলছে। জনপ্রিয়তার কারণে সান্দাকফুতে এখন হোটেলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩০টি। রয়েছে হোমস্টে। যে পর্যটকরা যাচ্ছেন, সেখানেই প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলে আসছেন। হোটেল, হোমস্টেগুলোও নিয়ম মানছে না। রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, “ওই কারণে কিছু কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এখন ট্রেকার ছাড়াও প্রচুর পর্যটক গাড়িতে সান্দাকফু ভ্রমণে যান। পর্যটকরা যেন সান্দাকফুতে জলের বোতল, বিস্কুটের প্যাকেটের মতো বর্জ্য না ফেলে সঙ্গে নিয়ে নামেন সেজন্য গাড়িতে ওঠার আগে সচেতন করতে চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” জিটিএ-র পর্যটন দপ্তরের সহকারী অধিকর্তা দাওয়া শেরপা জানান, পর্যটকরা কী সামগ্রী বহন করছেন, সেটা ওঠা এবং নেমে আসার পর খতিয়ে দেখা হবে। দূষণ ঠেকাতে এবং পর্যটকদের সাহায্যের জন্য থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।