প্রাপ্তবয়স্ক ভিডিও দেখার কারণে বাড়ছে বাল্যবিবাহ, শিক্ষাদপ্তরের রিপোর্টে উদ্বেগজনক তথ্য
বর্তমান | ২৯ জুলাই ২০২৫
সুখেন্দু পাল বর্ধমান
একটা প্রজন্ম একদা বেড়ে উঠত ‘ঠাকুমার ঝুলি’ বা ‘বাঁটুল দি গ্রেট’ কিংবা ‘হাঁদাভোঁদা’ দেখে ও পড়ে। আর এখনকার কিশোর-কিশোরীদের চোখ আটকে প্রাপ্তবয়স্ক ভিডিও কিংবা রিলসে। সবার হাতে ধরা স্মার্ট ফোন। স্ক্রিনে টাচ করলেই ভেসে উঠছে বয়স অনুপাতে অবাঞ্ছিত ওইসব ভিডিও। রঙিন জীবনের হাতছানি। বিগড়ে যাচ্ছে সাদাসিধে কচি মন। আগুপিছু না ভেবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে। ফলস্বরূপ, অপরিণত বয়সে প্রেম। সেটাও পরিণত হতে না হতেই পালিয়ে বিয়ে আঠারোর আগে। বছর ঘুরতে না ঘুরতে গর্ভবতী। বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। তা কমাতে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি কোনও দাওয়াই-ই কাজ করছে না বলেও মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি, নাবালিকা বিয়ের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে স্কুলগুলিতে সমীক্ষা চালিয়ে ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাতে এমনই উদ্বেগজনক মতামত দিয়েছেন। পাশাপাশি, মোবাইলের নেশায় আসক্ত হওয়ার আগেই অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা। এখন মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য। সেটা থেকে পড়ুয়াদের যেভাবেই হোক বের করে আনতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে এ ধরনের ঘটনা বেশি হচ্ছে বলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি। কেননা, ওই সব পরিবারে শিক্ষার গুরুত্ব কম। সেই সুযোগ নিচ্ছে অল্পবয়সী ছাত্রীরা। স্কুলের নাম তুলে ধরে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরিসংখ্যান দিয়েছেন। বর্ধমান শহরের একটি বিদ্যালয়ে কয়েক মাসের প্রেম-পর্ব কাটিয়ে বিয়ে করে ফেলে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী। বিয়ের বর্ষপূর্তিতে সন্তানেরও জন্ম দিয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের ছ’ থেকে সাতজন ছাত্রী বিয়ে করেছে। নেপথ্যে উঠে আসছে মোবাইল-আসক্তি। এরকম স্কুলের সংখ্যা জেলায় বহু। শিক্ষক-শিক্ষিকারা রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, অধিকাংশক্ষেত্রে ছাত্রীরা নিজেদের সম্মতিতে বিয়ে করছে। প্রশাসন খবর পেয়ে অনেকের বিয়ে আটকেছে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ-ও ময়দানে নেমেছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেমিনার করছেন। জেলাশাসক বলেন, ‘পূর্ব বর্ধমানের মানুষ অনেক সচেতন। তারপরও নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্যের! তবে, আগের তুলনায় বিয়ের সংখ্যা অনেক কমেছে। প্রসূতিদের মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে। এই সংখ্যা আরও কমাতে হবে। বিশেষ করে খণ্ডঘোষ, কেতুগ্রাম, ভাতারের মতো এলাকার বাসিন্দাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে।’ শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আধিকারিকদের পাশাপাশি ইদানীং কলেজ পড়ুয়ারাও বাল্যবিবাহ রোধে দায়িত্ব পালন করছেন। নাবালিকাদের সতর্ক করতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ক’দিন আগে নাটক মঞ্চস্থ করেন। অল্প বয়সে বিয়ে করলে কি পরিণতি হতে পারে, তা পড়ুয়ারা নাটকের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলিয়েছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার বলেন, ‘মোবাইলেই নাবালিকা ছাত্রীরা সবচেয়ে বেশি সময় নষ্ট করছে। তারা কি দেখছে, সেটা অভিভাবকরা নজর রাখছেন না। লাগাতার প্রাপ্ত বয়সের ভিডিও দেখতে দেখতে তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তারফলেই তারা চটজলদি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে না। যখন তাদের বোধদয় হচ্ছে তখন আর কিছু করার থাকছে না। অভিভাবকদেরও সতর্ক হতে হবে। শুধু আইন করে নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ করা সম্ভব নয়।’ শিক্ষিক শিক্ষিকরা বলছেন, স্কুলে লুকিয়ে অনেকে মোবাইল নিয়ে যাচ্ছে। একটু সুযোগ পেলেই তারা ভিডিও কিংবা রিলসে বুঁদ হয়ে যাচ্ছে।