• বাংলার লড়াই, বাঙালির লড়াই! রবি-ভূমে ভাষা আন্দোলন শুরু মমতার
    বর্তমান | ২৯ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বোলপুর: ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইল বীরভূম। ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষীদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই সূচনা হল রবি ঠাকুরের পুণ্যভূমি বোলপুর-শান্তিনিকেতনে। জনসুনামিতে ভাসতে ভাসতে ৩.৪ কিলোমিটার পথ পেরতে সময় লেগে গেল এক ঘণ্টারও বেশি। ট্যুরিস্ট লজ মোড় থেকে জামবনী মোড়। দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সমর্থনে সার্থক হল তৃণমূল কংগ্রেসের এই ঐতিহাসিক কর্মসূচি। এই মিছিল থেকেই দেশের প্রতিটি কোণায় বোলপুরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বাংলা বিরোধী চক্রান্তকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়ার বার্তা দিলেন জননেত্রী। তার এই আন্দোলনকে সমর্থন জানানোর জন্য সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‹এটা বাংলার লড়াই, বাঙালির লড়াই›। মিছিলের শুরু থেকেই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী মলয় ঘটক, সাংসদ শতাব্দী রায়, সাংসদ অসিত মিত্র সহ জেলা নেতৃত্বকে পাশে নিয়ে মানুষের সঙ্গে পা মেলালেন মমতা। তাঁর হাতে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি। মিছিলের মাঝে অনুব্রত মণ্ডলকে দেখা গেল মমতার কাছে এড়িয়ে গিয়ে তাঁর হাতে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিতে একটি উত্তরীয় পরিয়ে দিতে। এর আগেও বোলপুরে পদযাত্রা করেছেন মমতা। তবে এদিনের ভিড় আগের সমস্ত রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। চিত্রা মোড় থেকে শুরু করে চৌরাস্তা, প্রতিটি জায়গাতেই নেমেছিল মানুষের ঢল। রাস্তার দু’পাশ তো বটেই, বাড়ি এবং অফিসের বারান্দা ছাদেও দেখা গিয়েছে উপচে পড়া ভিড়। কেউ ব্যস্ত মোবাইলে ছবি ভিডিও করতে, আবার কেউ মুখ্যমন্ত্রীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে ছিলেন ব্যাকুল। মুখ্যমন্ত্রী ও মাঝেমধ্যে এগিয়ে যান দু›পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের কাছে। তাঁদের হাত থেকে নিলেন বাংলা ভাষার উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে লেখা প্ল্যাকার্ড। 

    এদিনের মিছিলে মহিলাদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের মধ্যেও মহিলার সংখ্যা ছিল বিপুল। শঙ্খধ্বনি, উলুরধ্বনি, ঢাক, ঢোল বাজিয়ে মমতাকে সমর্থন জোগাতে দেখা গেল তাঁদের। নিরাশ করেননি মমতাও। মিছিলে তো বটেই, পরে সমাজমাধ্যমেও বোলপুরের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা উজাড় করে দেন। এদিনের কর্মসূচির ছবি পোস্ট করে মমতা লেখেন, ‹আজকে যাঁরা জনস্রোতে পা মিলিয়েছেন আমি তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জানাই। আজকের এই মিছিলের কণ্ঠস্বর বুঝিয়ে দিয়েছে, আগামী দিনগুলিতে অ-গণতান্ত্রিক এবং জনবিরোধী কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও জোরালো হবে। দৃঢ় বিশ্বাস ভাষা-বিরোধী, জাতি-বিরোধী, বাংলা-বিদ্বেষীর সামনে বাংলার মানুষ কখনও মাথা নত করবে না।’   এদিনের মিছিলে পা মিলিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের নাতি তথা পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের ছেলে সুদৃপ্ত ঠাকুর, মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক গুণ, সৌগত সামন্ত, সঞ্জয় রায়, অসিত গড়াইরাও। মমতার এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বাংলা ভাষার উপর এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছেন তাঁরা। তাঁদের সামনে রেখেই এদিন মমতার গলায় ফের একবার করে শোনা গিয়েছে সম্প্রতি রক্ষার কথা। তিনি জানিয়েছেন, এই বাংলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভাষায় উজ্জীবিত। এই বাংলা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, রাজা রামমোহন রায়ের আদর্শে জাগ্রত। এই বাংলার প্রতি লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অত্যাচার, নিপীড়নের সঠিক জবাব গণতান্ত্রিক পথেই দেবে বাংলার মানুষ।’  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)