কোর কমিটির কনভেনার পদে কেষ্টতে আস্থা মমতার, দশ মিনিটেই সব বদল! উচ্ছ্বসিত অনুগামীরা
বর্তমান | ২৯ জুলাই ২০২৫
ইন্দ্রজিৎ রায় বোলপুর
মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধান। আর তার মধ্যেই বদলে গেল যাবতীয় সমীকরণ। ফের স্বমহিমায় অনুব্রত মণ্ডল। তাঁকে বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির কনভেনার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই পাশাপাশি, ইলামবাজারে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথি তালিকায় এক নম্বরে নাম চলে এল অনুব্রতর। বোলপুরের আইসির অডিও কাণ্ডের পর কেষ্টর এই উল্কা সম উত্থান বীরভূমে তৃণমূলকে কতটা অক্সিজেন জোগাবে, তা জল্পনা চলছে রাজনৈতিক মহলে।
একদা দলনেত্রীর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন অনুব্রত। গোরু পাচার মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার পরও তাঁর পাশেই ছিল দল। তিহার থেকে ফিরে আসার পর অবশ্য কেষ্ট কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ওই অডিওর পর তিনি কার্যত ব্যাকফুটে চলে যান। ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চেও তিনি ছিলেন সেটব্যাকে। ফলে, মুখ্যমন্ত্রীর বীরভূম সফরে অনুব্রত সরকারি মঞ্চে জায়গা পান কিনা, সে দিকে নজর ছিল সবার। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী অনুব্রতর সঙ্গে আলাদা করে ১০ মিনিট বৈঠক করেন। আর তার পরেই জেলা রাজনীতির ছবিটা পুরোপুরি বদলে যায়। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন অনুব্রত অনুগামীরা। তবে ‘দাদা’ ছিলেন সংযত। এ নিয়ে তিনি কোনওভাবেই খুলতে রাজি হননি। রাত বাড়তে জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, সরকারি অনুষ্ঠানে এসআরডিএ-এর চেয়ারম্যান হিসেবে আমন্ত্রিত অনুব্রত। শুধু তাই নয়, তালিকায় সবার উপরে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এরপর সোমবারের প্রশাসনিক বৈঠকেও অনুব্রতর নাম নেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনায় স্বস্তি পেল অনুব্রত শিবির।
বরাবরই অন্য ধাঁচে গড়া মানুষ অনুব্রত। পুলিসকে বোমা মারতে বলা, চড়াম চড়াম ঢাক বাজবে কিংবা পুলিস আধিকারিককে ঘড়ি দেখিয়ে হুমকি দেওয়া—বিতর্কের কেন্দ্রে থেকেছেন তিনি। তবে, বরাবরই তিনি ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য। গোরু পাচার কান্ডে সিবিআই ও ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দু'বছর জেল থাকার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হননি। সেই কারণেই দু’বছর জেলা কোর কমিটি দল চালালেও অনুব্রতর জেলা সভাপতির পদ অক্ষুন্ন ছিল। পরিস্থিতি বদলায় বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার পর। অনুব্রত সঙ্গে দল দূরত্ব বাড়ানো শুরু করে। পুলিসি ঝামেলাতেও পড়তে হয় তাঁকে। একুশে জুলাইয়ের শহিদ দিবসের মঞ্চেও তাকে দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরে ভাগ্য ফেরে একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই জেলা নেতার।
সোমবার রাতেই বদলে যায় যাবতীয় সমীকরণ। সরকারি মঞ্চে থাকার আমন্ত্রণ পান। ২২ জনের ওই তালিকায় জেলার বিধায়ক, সাংসদরা থাকলেও অনুব্রত নাম সবার উপরে। এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আলাদা করে অনুব্রতকে নিয়ে বলেন, কেষ্ট আমাকে অনেকদিন আগেই আহমদপুরের সুগার মিলের ব্যাপারে বলেছিল। ওখানে একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব বানানো হবে। এরপর ভাষা আন্দোলনের মিছিলেও মুখ্যমন্ত্রীর হাতে রবি ঠাকুরের ছবিতে উত্তরীয় দেন অনুব্রত। সন্ধ্যায় সকল কোর কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। আধ ঘন্টার বৈঠকের পর অনুব্রতকে কোর কমিটির কনভেনার করেন। এছাড়া আদিবাসী শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে জেলা পরিষদের মৎস্য দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ রবি মুর্মুকে কোর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন।
অনুব্রত অনুগামী বলে পরিচিত তাপস মণ্ডল, কৃপাময় ঘোষ বলেন, ‘দাদা বীরভূম জেলার সংগঠনটা নিজের হাতে গড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ফের তাঁর লড়াইকে মর্যাদা দিয়েছে। এটা আমাদের পরম প্রাপ্তি। আজকের পর থেকে আমরা সবাই চাঙ্গা।’