নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: নাবালিকা বিয়ের লজ্জার রেকর্ড মুছতে আজ, মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের ৪৫০ হাইস্কুলে প্রজেক্টর বসিয়ে ভার্চুয়াল মিটিং করবেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী। প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকা ছাড়াও অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা এই ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশ নেবে। সেখানে জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের আধিকারিকরা থাকবেন। নাবালিকা বিয়ে, নাবালিকা অবস্থায় গর্ভবতী, সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ে উপর আলোচনায় অংশ নেবেন জেলাশাসক। শিক্ষায় এগিয়ে থাকা এই জেলার সঙ্গে নাবালিকা বিয়ে ও প্রেগন্যান্সির লজ্জার রেকর্ডও জুড়ে গিয়েছে। প্রত্যেকের সামনে এবিষয়ে তথ্য তুলে ধরে এই গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। জেলা কন্যাশ্রী সেলের উদ্যোগে দুপুর ১২টা থেকে এক ঘণ্টার এই ভার্চুয়াল মিটিং এককথায় অভিনব হতে চলেছে।
জেলাশাসক বলেন, প্রজেক্টর বসিয়ে প্রায় ৪৫০ স্কুলকে মিটিংয়ে যুক্ত করা হচ্ছে। নাবালিকা বিয়ের ফলে নানা সমস্যা হচ্ছে। তাতে নাবালিকা অবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা, প্রসূতি মৃত্যু, শিশুর অপুষ্টি সহ নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। নাবালিকা বিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এতগুলি সমস্যা থেকে রেহাই সম্ভব। এনিয়েই এক ঘণ্টার আলোচনা চলবে।
পূর্ব মেদিনীপুর নাবালিকা বিয়ের নিরিখে গোটা রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে। এমনকী, পরিসংখ্যানের নিরিখে গোটা দেশের মধ্যেও এই জেলা সামনের সারিতে রয়েছে। সমাজ কল্যাণ দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৭২জন নাবালিকার বিয়ের কেস নথিভুক্ত হয়। আর নথিভুক্ত না হওয়া ঘটনা আরও কয়েকগুণ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিস নাবালিকা বিয়ে ও পালানো আটকাতে স্কুলে স্কুলে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ কর্মসূচি গ্রহণ করছে। পুলিস অফিসার ও কর্মীরা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে এনিয়ে সভা করছেন। সেখানে ‘মনের কথা’ বাক্স নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বয়ঃসন্ধিকালীন নানা সমস্যার কথা গোপনে সংগ্রহ করতে পুলিসের এই ‘মনের কথা’ বাক্স ভাবনা। চাইল্ড হেল্প লাইন টোল ফ্রি ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে বাল্য বিবাহ সহ শিশুর যেকোনও সমস্যা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। গত তিন মাসে ওই নম্বরে আসা তথ্যের ভিত্তিতে ৬০টি নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে বলে জেলা সমাজকল্যাণ অফিসার জানান। এছাড়াও ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন ইউনিট নাবালিকা বিয়ে নিয়ে কাজ করে। কিন্তু, এত কিছুর মধ্যেও মতো নাবালিকা পালানো ও বিয়ের ঘটনা ঘটছে। ময়না, তমলুক, চণ্ডীপুর, ভূপতিনগর, এগরা সহ কয়েকটি থানার এই ঘটনা অনেক বেশি ঘটে চলেছে।
সোমবার ভূপতিনগর থানার চম্পাইনগর হাইস্কুলে নাবালিকা বিয়ে রুখতে পুলিসের উদ্যোগে সচেতনতা শিবির হয়। রবিবার ওই স্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী প্রেমিকের সঙ্গে চম্পট দিয়েছে। ছাত্রীর বাড়ি ভগবানপুর থানার গোপীনাথপুর গ্রামে। প্রেমিকের থেকে দূরে রাখতে চার মাস আগে আত্মীয় বাড়িতে রেখে তাকে ওই স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু, তাতেও আটকে রাখা যায়নি। থানার সাব ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের জেলায় নাবালিকা বিয়ে পুলিস ও প্রশাসনের কাছে একটা মস্তবড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিদিন এনিয়ে অভিযোগ আসছে। নাবালিকা উদ্ধার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে পুলিস। অভিভাবকদের এনিয়ে সচেতন হতে হবে।