• সাইকেলে চেপেই চাঁদের পাহাড়ে পা রাখলেন করিমপুরের জ্যোতিষ্ক! মনে করিয়ে দিলেন বিভূতিভূষণের ‘শঙ্কর’কে
    আনন্দবাজার | ২৯ জুলাই ২০২৫
  • বিভূতিভূষণ বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের ‘শঙ্কর’ পারেনি, কিন্তু নদিয়ার করিমপুরের জ্যোতিষ্ক বিশ্বাস পেরেছেন। ভালবাসা এবং জেদ দুই মিলে বিপদ সঙ্কুলপথ, হিংস্র প্রাণীর আক্রমণের ভয়, বিষাক্ত সব পোকামাকড় আর ব্যাপক তুষারঝড়ের মতো প্রতিকূলতা সামলে পৌঁছোলেন স্বপ্নের চাঁদের পাহাড়ে। প্রথম বাঙালি হিসেবে সত্যিকারের চাঁদের পাহাড় ছুঁয়ে দেখলেন নদিয়ার করিমপুরের ছেলে জ্যোতিষ্ক, তা-ও আবার সাইকেল চেপে। যদিও সাইকেলে পাহাড় অভিযানের নজিরও নতুন নয়। এর আগেও বাঙালি পর্যটকেরা সাইকেলে চেপে অভিযানে গিয়েছেন। কিন্তু, জ্যোতিষ্কের এই অভিযানের সাফল্য আরও একবার বাঙালি পাঠককে চাঁদের পাহাড় উপন্যাস এবং শঙ্করের কথা মনে করিয়ে দিল।

    ছোট থেকে ভালবাসা বলতে সাইকেল আর ‘অ্যাডভেঞ্চার’-এর গল্প। বড় হয়ে ভালবাসাটা বদল হল ক্ষ‍্যাপামোতে। শঙ্কর না পারলেও বিভূতিভূষণের স্বপ্ন পূরণ করলেন জ্যোতিষ্ক। সব ধরনের প্রতিকূলতা সামলে স্বপ্নের চাঁদের পাহাড়ে পা রেখেছেন তিনি। প্রথমে করিমপুর থেকে সাইকেলে চেপে চাঁদের পাহাড় বা রোয়েনজোরি মাউন্টেনের বেস ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছোন তিনি । তার পর ট্রেকিং করে ওঠেন পর্বত শীর্ষে। সঙ্গে ছিল বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড় উপন্যাস, আর ছোট একটি চিরকুট। যেখানে লেখা ‘ট্রিবিউট টু বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়’।

    জ্যোতিষ্ক যখন উগান্ডায় ছিলেন সেখানকার একটি দৃশ্য ভিডিয়োর মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন তিনি। ওই ভিডিয়োতে জ্যোতিষ্ককে বলতে শোনা যায়, “বিভূতিবাবু, আমি রয়েছি আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্য।” কথা রেখেছেন জ্যোতিষ্ক। পৌঁছেছেন বিভূতিভূষণের কল্পনার চাঁদের পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মার্গারিটা পিক, যা রুয়েনজোরি পর্বতমালায় অবস্থিত (এর অপর নাম চাঁদের পাহাড়)। এর উচ্চতা ৫,১০৯ মিটার (১৬,৭৬৩ ফুট)। এটি আফ্রিকার তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। বাস্তবে কোনও বাঙালির এই প্রথম চাঁদের পাহাড় জয়।

    নদিয়ার করিমপুরের জামতলার বাসিন্দা জ্যোতিষ্কের বাবা প্রাক্তন সেনাকর্মী। বাবার পেশার সুবাদে ঘুরেছেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য। তাই ভ্রমণের শখ ছোট থেকেই। ভ্রমণপিপাসু সাইকেলপ্রেমী এই যুবক এর আগে হিমালয় থেকে শুরু করে একাধিক জায়গায় ভ্রমণ করলেও মূল লক্ষ্য ছিল 'চাঁদের পাহাড়'। গত জুন মাসে সম্পূর্ণ নিজের জমানো টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন চাঁদের পাহাড়ের উদ্দেশে। গন্তব্য ছিল পূর্ব আফ্রিকার মোম্বাসা ‘রেলওয়ে হেড অফিস’।

    প্রায় ১০০ বছর আগে বিভূতিভূষণের শঙ্কর এখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল চাঁদের পাহাড়ের উদ্দেশে। ঠিক তাঁর এক শতাব্দ পরে বাংলার এ যুগের শঙ্কর সাইকেলে যাত্রা শুরু করেন চাঁদের পাহাড়ের উদ্দেশে। চাঁদের পাহাড়ে পৌঁছোনোর আগে পেরিয়েছেন আফ্রিকার একাধিক দেশ। এই যাত্রায় অনেক মানুষের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে, পরিচয়ও হয়েছে। খুব সহজেই হয়ে উঠেছেন তাঁদের একজন। বর্ণনা করেছেন একাধিক রোমহর্ষক, বিপদসঙ্কুল অভিজ্ঞতা। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন মানুষখেকো বাঘের নখ। শঙ্কর যেখানে স্টেশন মাস্টার ছিল, তেমনই এক পরিত‍্যক্ত স্টেশন ঘুরে দেখিয়েছেন জ্যোতিষ্ক।

    এর আগে ২০১৯ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো পর্বতের সর্বোচ্চ স্থান উহুরু শৃঙ্গে (৫,৮৯৫ মিটার) পৌঁছোন বীরভূমের উজ্জ্বল। সেখানে তিনি জাতীয় পতাকা ওড়ান। সঙ্গী ছিল তাঁর প্রিয় সাইকেল ‘চেতক’।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)