১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে তিস্তা, ভূমিধসে বিপর্যস্ত সিকিম-কালিম্পং যোগাযোগ
প্রতিদিন | ২৯ জুলাই ২০২৫
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: সোমবার রাতে সিকিম পাহাড়ে প্রবল বর্ষণের ধাক্কায় ভূমিধস ও হড়পা বানে লণ্ডভণ্ড দশা বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দার্জিলিংয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। শিলিগুড়ি-সিকিম সড়ক যোগাযোগের ‘লাইফ লাইন’ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে তিস্তা। সেভক-রাংপো এবং সিংতাম ও রংপোর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ভূমিধসেও অবরুদ্ধ হয়েছে জাতীয় সড়ক। সিকিমের গ্যাংটক জেলায় কয়েকটি রাস্তা ভূমিধসে অবরুদ্ধ হয়েছে। গ্যাংটক শহরে প্রচুর গাড়ি ও বাইক কাদা মাটিতে তলিয়েছে। সোমবার রাতে সিকিমের রাজধানী শহরের রাজপথ কোমর সমান জলে ভেসে নদীর চেহারা নেয়। পাকিয়ংয়েও ভূমিধসে সড়কপথে যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের তরফে মঙ্গলবার সিকিমের পাঁচ জেলায় ফের অতিভারী বর্ষণের ‘কমলা’ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সমতলে তিস্তা নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে শুরু করায় সেচ দপ্তরের তরফে ‘লাল’ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তুমুল বৃষ্টি হয়েছে সিকিমের বিভিন্ন জেলায়। তারই জেরে পাহাড়ি তিস্তা রুদ্রমূর্তি নিয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সিকিমের নামথাংয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৫৫ মিলিমিটার। তাদংয়ে ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গ্যাংটকে ১২৩ মিলিমিটার, মঙ্গনে ১১৬ মিলিমিটার, ডামথাংয়ে ১০০ মিলিমিটার এবং গেইজিংয়ে ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পশ্চিম্বঙ্গের কালিম্পং জেলার লাভায় ৭১ মিলিমিটার এবং মুনসংয়ে ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, “মঙ্গলবার মঙ্গন, গেইজিং, গ্যাংটক, নামচি ও পকিয়ং জেলায় অতিভারী বর্ষণের ‘কমলা’ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।” স্বভাবতই আরও বিপদের শঙ্কা রয়েই গিয়েছে।
সোমবার রাতের অতিভারী বৃষ্টিতে ফুসে ওঠা তিস্তার জলে ভেসেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। শিলিগুড়ি-সিকিম সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ২৯ মাইল এলাকায় রিংবাঁধ ভেঙে তিস্তা ঢুকে পড়েছে জাতীয় সড়কে। পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার তিস্তা বাজার প্লাবিত হওয়ায় দার্জিলিং-কালিম্পং সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। এছাড়াও ভূমিধসে বিস্তীর্ণ এলাকা বিপর্যস্ত হয়েছে। সেভক-রাংপো এবং সিংতাম ও রংপোর মধ্যে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের কিছু অংশ অবরুদ্ধ হয়েছে। জাতীয় সড়কের রবি ঝোরার লিখুভির এলাকায় ভূমিধসের জন্য শিলাগুড়ি-সিকিম-কালিম্পং যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। কালিম্পংয়ের তারখোলায় ভূমিধসের ফলে পশ্চিমবঙ্গের সেভক এবং সিকিমের রংপোর মধ্যে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
এছাড়াও, সিংতাম ও রংপোর মধ্যে বারদাংয়ে একটি বড় ভূমিধসের ফলে জাতীয় সড়ক-১০ বন্ধ হয়েছে। গ্যাংটক জেলায় সিংতাম-ডিকচু সহ কয়েকটি রাস্তা ভূমিধসে অবরুদ্ধ। অন্যদিকে পাকিয়ংয়ের একটি বড় সড়ক সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। গ্যাংটকে শহরে কাদামাটিতে প্রচুর গাড়ি ও বাইক তলিয়েছে। চুজাচেন নির্বাচনী এলাকার দলপাচাঁদের চাগেলাখার দিকে যাওয়ার টার্নিং পয়েন্টের কাছে বিরাট ভূমিধস নেমেছে। রাস্তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়েছে। তারখোলায় ভূমিধস নেমেছে। ভূমিধসে অবরুদ্ধ হয়েছে সিংতাম-ডিকচু এবং নামথাং-নামচি রোড। এদিকে ধস সরিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করারও চেষ্টা চলছে। প্রশাসনের পাশাপাশি অভিযানে নেমেছে এসএসবির ৭২ ব্যাটালিয়ন। জওয়ানরা ইতিমধ্যে রিম্বি-দারাপ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছে। এখানে রিম্বি জলপ্রপাতের কাছে ভূমিধসের রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল।